রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার একটি ‘নাটক’ করছে, কারণ তারা মনে করে, এ অঞ্চলের ‘কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশ’ তাদের ‘পকেটে’ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন,
রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পূর্তিতে গতকাল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে চীন, ভারত ও জাপানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (মিয়ানমার) মনে করে, অন্তত তিনটি দেশ তাদের পকেটে রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ আর কী করতে পারবে? এ অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ সম্পাদিত ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট : টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে’ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রযুক্তিগত ও ভূ-রাজনৈতিক-এই পাঁচ বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই শিক্ষক বলেন, তার মতে, গত কয়েক দিনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে যা হয়েছে, তা কেবলই নাটক। মিয়ানমারের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দ্বিতীয় দফা প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নাগরিকত্বসহ চার শর্ত তুলে রোহিঙ্গারা কেউ রাখাইনে তাদের ভিটেমাটিতে ফিরতে রাজি হয়নি। অধ্যাপক ইমতিয়াজও মনে করেন, রোহিঙ্গাদের সব অধিকার দিতে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত তাদের ফেরনো যাবে না। মিয়ানমার এ বিষয়ে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। দুই বছর ধরে তারা নাটক করে চলেছে। আমার মনে হয়, এখন ওই তিন দেশের দিকে মনোযোগ বাড়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কাজে নতুন কোনো কৌশল ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সেরকম উদ্যোগ খানিকটা নিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে চীনে গেছেন। আর তার সেই সফরের যৌথ ঘোষণার ১৯ নম্বর আর্টিকেলে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে হবে এবং এক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা থাকবে। ইমতিয়াজ বলেন, দিল্লির কাছেও একই ধরনের উদ্যোগ চাওয়া হয়েছে। টোকিওর কাছেও তেমনটা চাইতে হবে। এই তিন দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক চমৎকার। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি ‘জটিল’ সমস্যা এবং এর সমাধান অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। আর টেকসই সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেজন্য সময় লাগবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মাহবুব উজ জামান বলেন, দ্বিপক্ষীয় চেষ্টার পাশাপাশি এ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজেদের দেশে ফিরতে পারে, সেজন্য মিয়ানমারের তরফ থেকে জবাবদিহিতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন এই কর্মকর্তা।
কানাডার হাই কমিশনার বেনোয়া প্রিফঁতেন বলেন, রোহিঙ্গারা সুবিচার পাক-সেটা তারাও চান; আর সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাখাইনে যাই ঘটে থাকুক, সেজন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রিফাদ আহমেদ এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, অ্যাকশন এইড ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড স্টাডিজ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।