টমটম চালক সাইদুল ইসলাম (১৭) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার ঘাতক কাজল দেবনাথ শুক্রবার বিকালে সুনামগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের । নিজের দোষ স্বীকার করে হত্যার বর্ণনা দেয় সে। পরে তাকে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাজল দেবনাথকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার অপর তিন আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার আতুকুরা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শেখ বিলাল হোসেন (৪৫) ও একই জেলার বিজয়নগর থানার জালালপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে নৈশপ্রহরী শরিফ মিয়া (৩৫) ও প্রধান আসামি কাজল দেবনাথের বোন জামাই নাসিরনগর থানার কালিবাড়ি গ্রামের মহেশ্বর দেবনাথ (৪৪)। তাদের মধ্যে বিলাল ও শরিফ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের রশিদপুর এলাকায় বসবাস করে আসছিল।
সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) মো. মাহমুদ হাসান চৌধুরী জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার আতুকুরা গ্রামে আমি ও জগন্নাথপুর থানার এসএস অনিক দে’র নেতৃত্বে গত ২১শে আগস্ট রাতে অভিযান চালিয়ে গোপাল দেবনাথের ছেলে কাজল দেবনাথকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রথমে তার কাছ থেকে টমটম চালকের মুঠোফোন পাওয়া যায়। তার দেয়া স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে তার বোন জামাই মহেশ্বর দেবনাথের একই উপজেলার কালিবাড়ি গ্রামের বাড়ি থেকে খুন করে ছিনিয়ে নেয়া ব্যাটারি চালিত টমটম উদ্ধার করি। পরে তার কথামতো লাশ উদ্ধার হয় সিলেটের রশিদপুর এলাকা থেকে। তিনি বলেন, শেখ বিলাল হোসেন একজন ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী। তিনি সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গারী ব্যবসা করছেন। তার কর্মচারী হিসেবে ভাঙ্গারীর মালামাল জগন্নাথপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রয় করতো কাজল দেবনাথ।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের লোকজন জানান, ঈদের আগের দিন টমটম চালক জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের বাউরকাপন গ্রামের সাইদুল ইসলামের টমটম গাড়ি রাসেল মিয়া পরিচয়ে ভাড়া নেয় কাজল দেবনাথ। সেদিন গাড়ি না চালিয়েই ৫শ’ টাকা দিয়ে বিদায় দেন সাইদুলকে। পরদিন ১১ই আগস্ট ফোন করে সাইদুলকে ডেকে নিয়ে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শেখ বিলাল হোসেনের দক্ষিণ সুরমার কুতুবপুর এলাকার গোডাউনে নিয়ে যান। সেখানে শেখ বিলাল, কাজল দেবনাথ ও দোকানের নৈশপ্রহরী শরিফ মিয়া মিলে টমটম চালক সাইদুরের ঘাড়ে হ্যামার (কাঠের শক্ত টুকরা) দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে লাশ রশিদপুর এলাকার একটি ঝোঁপে ফেলে দেয়।
নিহতের বড় ভাই রিয়াজুল হক বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে ঘাতকরা হত্যা করে। পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রশিদপুর এলাকা থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করেছে।
জগন্নাথপুর
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আসামির
স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি দেড় লাখ টাকা
দামের টমটম গাড়ি আত্মসাৎ করতে তাকে হত্যা করা হয়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত
শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামি ১৬৪ ধারা জবানবন্দি প্রদান
করে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বর্ণনা দিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই
রিয়াজুল বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। অপর আসামিদের
গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।