গত বুধবার ‘স্কিন অ্যান্ড বোনস আনরিজলভড‘ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রাফিক ইন্টারন্যাশনাল। গত ১৮ বছরে বিশ্বের ৩২টি দেশ থেকে ২ হাজার ৩৫৯টি বাঘ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি বাঘ বাংলাদেশের বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ১৯ বছর ধরে প্রতি বছর ১২০টি বাঘ হারিয়ে যায়। এর
মধ্যে চামড়ার জন্য প্রতি বছর গড়ে ৫৮টি বাঘ পাচার করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে
পাচারের ঘটনায় জীবিত ও মৃত আস্ত বাঘ মেলার ঘটনা বাড়ছে। খবর বিডিনিউজের।
ভারতে বাঘের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৭টি। বাঘের পাচার ও অবৈধ বাণিজ্যেও যে দেশটি
শীর্ষে আছে, তা দেখা গেছে ট্র্যাফিকের গবেষণায়। তাদের গবেষণার সময়কালে
ভারতের ৪৬৩টি পাচারের ঘটনা থেকে ৬২৫টি বাঘ শনাক্ত করা হয়। অন্যদিকে
বাংলাদেশের ৩৩টি ঘটনা থেকে ৫১টি বাঘ চিহ্নিত করা হয়। এ বছরের মে মাসে
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে জরিপ চালিয়ে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়ার কথা
জানিয়েছিল বন বিভাগ। এর তিন মাসের মাথায় সুন্দরবনের ছাপড়াখালী এলাকা থেকে
এক বাঘিনীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের এই বাঘিনীর
বার্ধক্যজনিত মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলের ১৩টি দেশের বাঘ পাচারের চিত্র উঠে
এসেছে। এসব ঘটনায় কখনও মিলেছে বাঘের আস্ত দেহ। কখনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। ৪০
শতাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে বাঘের চামড়া; আর ২৯ শতাংশ ঘটনায় আস্ত দেহের
মধ্যে ১৫ শতাংশ ছিল মৃত বাঘ।
একটি বাঘের চারটি শ্বাদন্ত দাঁত থাকে। ১০ কেজির মত হাড় থাকে। ফলে কোনো
ঘটনায় ২টি মাথার খুলি ও ১৩টি দাঁত পাওয়ার অর্থ অন্তত ৪টি বাঘ হত্যা করা
হয়েছিল। যদি ৩৫ কেজি হাড় পাওয়া যায়, তবে তিনটির বেশি বাঘ হত্যা করা হয়েছিল
বলে জানাচ্ছে ট্র্যাফিকের গবেষণা পদ্ধতি। তবে বাঘের আস্ত দেহ বা
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধারের ঘটনা দিয়ে অবৈধ পাচারের পুরো চিত্রটি বোঝা যে সম্ভব
নয়, তাও জানিয়েছে সংস্থাটি। বাঘ পাচার ও হত্যার অসংখ্য ঘটনা তাই অগোচরেই
থাকছে।
বাঘ পাচারকারী ও হত্যাকারীদের ধরা পরার তথ্যও রয়েছে প্রতিবেদনে। মোট ৫৯১টি
ঘটনায় এক হাজার ১৬৭ জনকে আটক হয়। এর মধ্যে ৩৮ শতাংশ আটকের ঘটনা ভারতে। মোট
১৯৯টি ঘটনায় বাঘ পাচারে জড়িত হওয়ার কারণে কারাবাসের রায় হয়। গড়ে ৪ বছর
পর্যন্ত কারাবাসের শাস্তির কথা জানাচ্ছে ট্র্যাফিকের গবেষণাটি।