দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ । চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ বানাতে চায় সরকার। টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, বহুল প্রত্যাশার টানেল নির্মাণ কাজ ৪৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প শীর্ষক চার লেনের দুটি টিউব সম্বলিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তলদেশ দিয়ে মূল টানেল নির্মিত হচ্ছে। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইকালে তিনটি অ্যালাইনমেন্ট তৈরি করা হলেও ‘সি’ অ্যালাইনমেন্ট ধরেই টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। টানেলের অ্যালাইনমেন্ট হচ্ছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। টানেলের প্রবেশপথ হবে নেভি কলেজের কাছে, বহির্গমন পথ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা-সংলগ্ন ঘাট। দেশের প্রথম এ টানেলটি ‘ডুয়েল টু লেন’ টাইপে ‘শিল্ড ড্রাইভেন মেথড’ পদ্ধতিতে নির্মিত হচ্ছে। টানেল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকার ‘জি টু জি’ অর্থায়নে টানেলটি নির্মাণ করছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা এবং চীনের এক্সিম ব্যাংক ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। টানেলটি চট্টগ্রাম শহরে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ ঘটবে। এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এটি নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রাম শহর, বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণের সময় ও খরচ কমবে। একইসঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প কারখানার কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহন সহজতর হবে, বিকশিত হবে পর্যটন শিল্প। টানেলটির আশপাশে শিল্পোন্নয়ন, পর্যটনের বিকাশ ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে; যা জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর আউটার রিং রোডের শেষ প্রান্তে নদীপাড়ের বিশাল এলাকা জুড়ে চলছে টানেল নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। আনোয়ারা অংশে ডিএপি সার কারখানা ও কাফকোর মাঝামাঝি মাঝের চর এলাকায় প্রকল্পের সাইট অফিস, আবাসস্থল ও যন্ত্রপাতি রাখার স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে অনেক আগে। পতেঙ্গা অংশে স্থায়ীভাবে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের দুটি সাইট অফিস।
বর্তমানে সাগর মোহনায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে চলছে খননের মূল কাজ। কর্ণফুলীর পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে মাটি কেটে আনোয়ারার দিকে এগুচ্ছে। এ পর্যন্ত টানেলের ৩৬০ মিটার অংশে ১৮০টি রিং বসানো হয়েছে। আটটি আরসিসি পাটাতন যুক্ত হয়ে প্রতি দুই মিটারের একটি রিং তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ মিটার করে টানেল তৈরির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর মধ্যভাগে পানির উপরের স্তর থেকে প্রায় ১৫০ ফুট গভীরে টানেলের টিউব স্থাপন করা হবে। নদীর তলদেশ থেকেও প্রায় ৫০-৬০ ফুট নিচে টানেলটি হবে। দুই টিউবে পৃথক টানেল নির্মিত হবে। প্রতি টিউবে দুই লাইন করে চার লেনে গাড়ি চলাচল করবে। দুই টিউবের সাথে পৃথক তিন স্থানে সংযোগ সড়ক থাকবে; যা দিয়ে জরুরি মুহূর্তে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাতায়াত করা যাবে।
জানা যায়, নদীর তলদেশে ৯৪ মিটার দীর্ঘ ও ২২ হাজার টন ওজনের বোরিং মেশিন দিয়ে চলছে খনন কাজ। টানেলে স্থায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দুই প্রান্তে ৩৩ কেভির দুটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও স্থাপন করা হয়েছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031