বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন হয়তো আরামে আছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তবে একটা সময় এই আরাম আর থাকবে না। এখানে অনেক দিন থাকলে তাদেরই সমস্যা হবে। এটা তাদের বুঝতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
রোহিঙ্গাদের থেকে যাওয়ার জন্য যারা প্ররোচনা দেবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য অনেকেই প্ররোচনা চালাচ্ছেন। লিফলেট বিতরণ করছেন। ইংরেজিতে প্ল্যাকার্ড লিখে দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমার সৃষ্টি করেছে। এই সংকট তাদেরই সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য মিয়ানমারকে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমরা আশা করছিলাম আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। কিন্তু হল না। এরপরও আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাখাইনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে আমরা একটি কমিশন গঠন করতে চাই। এই কমিশনে বিভিন্ন দেশের লোকজন থাকবেন। তারা সেখানকার পরিবেশ দেখবেন। রাখাইনের পরিবেশ কেমন তা দেখার জন্য মাঝিরাও (রোহিঙ্গাদের স্থানীয় নেতা) যেতে পারেন। আমরা সেই প্রস্তাবও দিয়েছি। মাঝিরা সরেজমিন দেখে এসে বলবেন, সেখানকার পরিবেশ কেমন।’
ভুল বোঝাচ্ছে কিছু এনজিও :
কিছু এনজিওর তৎপরতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল এক বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এই অভিযোগ শোনে ওই এনজিওগুলোকে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এক বছর আগে প্রথম দফার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার দিনই সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় ওঠে।
নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একাংশকে এদিন ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা হলেও তারা যেতে রাজি হয়নি। রোহিঙ্গাদের না যাওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের প্রতি তাদের অনাস্থার বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আস্থার যে ঘাটতি আছে, তা মিয়ানমারকেই দূর করতে হবে।’
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, কিছু কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের বোঝাচ্ছে, তারা যেন নিজ দেশে না যায়। এনজিওরা বোঝাচ্ছে, নাগরিকত্বসহ কিছু শর্ত পূরণ না হলে যেন তারা না ফিরে যায়। কমিটি এসব এনজিওদের কাজ মনিটরিং করে তাদের চিহ্নিত করতে বলেছে।’
বাংলাদেশের আহ্বানে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার ৭ লাখ শরণার্থীকে ফেরত নিতে রাজি হলেও রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব এবং রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস নিশ্চিতসহ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। তারা বলছে, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের নাগরিকত্ব, জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল, নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এদিকে আর বাংলাদেশও বলছে, জোর করে কোনো শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হবে না।
ফারুক খান বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘সেইফ জোন’ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সফরের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।’

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031