সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে বিচার কার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এ সিদ্ধান্ত জানার পর বিচারপতিরা ছুটির আবেদন করেছেন। ওই তিন বিচারক হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এবং বিচারপতি এ.কে.এম জহিরুল হক। গতকালের কার্যতালিকায় তাদের নাম ছিল না। তারা বিচারিক কার্যক্রমেও অংশ নেননি।
তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের বিষয়টি গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিকালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচার কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয় এবং পরবর্তীতে তারা ছুটির প্রার্থনা করেন। তিন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের কজলিস্টে দেখা যায়, বুধবার এই তিন বিচারপতির বেঞ্চ ও এখতিয়ার ছিল। এদের মধ্যে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী মূল ভবনের ১০ নম্বর এজলাসে বসতেন। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক মূল ভবনের ৬ নম্বর এজলাসে এবং বিচারপতি এ, কে, এম, জহিরুল হক অ্যানেক্স ভবনের ৩০ নম্বর এজলাসে বসতেন। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ২০০২ সালের ২৯শে জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। পরে স্থায়ী বিচারপতির শপথ নেন তিনি। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক ২০১০ সালের ১৮ই এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ২০১২ সালের ১৫ই এপ্রিল স্থায়ী বিচারপতি হন তারা।
সিনিয়র আইনজীবীরা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম একসঙ্গে তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হলো। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচার বিভাগের আরো অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কেবল তিন বিচারপতিই নন, আরো অনেক বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেছি। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে দুর্নীতি করেন।
আইনজীবীরা তাদের কাছে প্রতিদিন হয়রানির শিকার
হচ্ছেন। অপরদিকে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের অনুসন্ধান বিচার বিভাগের অন্যদের জন্য একটি বার্তা
বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন,
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতিকে কাজ থেকে
বিরত থাকতে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদেরকে বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই এ
কারণে যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং এটা রাষ্ট্রপতি ও প্রধান
বিচারপতির বিষয়। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে হলে আমাকে আগে বিষয়টি সম্পর্কে
অবগত হতে হবে। এদিকে সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক
সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমল
মিলিয়ে এমন ঘটনার নজির নেই।