নগরে নতুন খাল খনন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ২৫ দশমিক ১৭ একর ভূমি। এ ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী অর্থের কোনো সংকট নেই। আপত্তি নেই ভূমি মালিকদের পক্ষ থেকেও। তবু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে প্রকল্পটির প্রধান অঙ্গ ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম। ফলে শুরু করা যাচ্ছে না খনন কাজও। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ আছে আর মাত্র ১০ মাস।
প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার নতুন খাল খনন প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজন এক হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় প্রকল্পের জিওবি সহায়তা হিসেবে দুই কিস্তিতে ৯১৫ কোটি ৪২ হাজার টাকা প্রদান করে চসিককে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ১৯ জুন একসঙ্গে ৮১৫ কোটি ২৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া অর্থের পুরোটাই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করে চসিক। এদিকে অর্থের যোগান হলেও ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমটি আটকে আছে প্রক্রিয়াগত বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। এক্ষেত্রে অধিগ্রহণের নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে দায়ের করতে হয় এলএ মামলা। পরে কেন্দ্রীয় ভূমি অধিগ্রহণ কমিটিতে অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে হয়। এই নিয়ম মেনে নতুন খাল খনন প্রকল্পের অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য ভূমিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে পৃথক পাঁচটি মামলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায়। এর মধ্যে বিভিন্ন ধাপ শেষে মাত্র একটি মামলা চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে কেন্দ্রীয় ভূমি অধিগ্রহণ কমিটিতে। অনুমোদিত অংশে বন্দর-বাকলিয়া মৌজায় ভূমির পরিমাণ মাত্র ৩ দশমিক ৮৯ একর।
অবশ্য শীঘ্রই আরেকটি মামলা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, ‘বাকি তিনটি মামলার মধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে দুটি জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা। বাকি একটি মামলা পাঠাতে একটু সময় লাগবে।’
এ বিষয়ে সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলে ভূমি অধিগ্রহণ করা যায় না। কিন্তু এখানে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে তা বিলম্ব হচ্ছে। প্রক্রিয়া কমলে কাজ দ্রুত হত।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে যে মামলার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে তার বিপরীতে কাজ শুরু করা হবে। অনুমোদিত অংশে শীঘ্রই দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে নগরীর ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া এবং ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডভুক্ত এলাকায়। পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ভূমি মালিক আছেন ১০০ জন এবং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে দুই শতাধিক। গত ৩১ জানুয়ারি পূর্ব বাকলিয়া এবং ৫ ফেব্রুয়ারি পূর্ব ষোলশহর এলাকার ভূমি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মেয়র। ওইদিন তাদের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। ওইদিন ভূমি মালিকরাও ক্ষতিপূরণ পেলে জমি প্রদানে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলেন। এদিকে যে অংশে খালটি খনন করা হবে সেখানে আড়াই শতাধিক স্থাপনা আছে বলে জানিয়েছেন চসিকের এস্টেট অফিসার এখলাছুর রহমান।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লক্ষ ৪ হাজার টাকায় প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছিল। কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি চসিক। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর খাল খননের সংশোধিত প্রকল্পটি ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকায় চূড়ান্ত একনেক। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে।
সংশোধিত প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী, নতুন খালটি নগরীর বারইপাড়াস্থ চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ্ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পার্শ্বে জানালি বাপের মসজিদ হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষে খালের উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২টি রাস্তা নির্মাণ করা হবে। নতুন খাল খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে এবং নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির ফলে জনগণের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার হবে বলে মনে করেন চসিকের প্রকৌশলীরা।