জাকির নায়েক বর্ণবাদী রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে ফেলছেন মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ভারতের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও তুখোড় বক্তা। এ মন্তব্য করেছেন স্বয়ং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ফলে জাকির নায়েককে তিনি মালয়েশিয়ায় কোনো রকম রাজনৈতিক বক্তৃতা দেয়া থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন।
ভারত থেকে পালিয়ে মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নেয়া জাকির নায়েকের প্রতি অতীতে বেশ কয়েকবার নিজের সমর্থন জানালেও রোববার নিজের সুর পাল্টে ফেলেন মাহাথির মোহাম্মদ। কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক বর্ণবাদী মন্তব্যের মাধ্যমে জাকির নায়েক অনেক দূরে চলে গেছেন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশটির সংখ্যালঘু চীনাদের নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন জাকির নায়েক। ওই বক্তব্যে তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাসরত চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকদের আগে দেশে ফেরার আহ্বান জানান।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের চেয়ে মালয়েশিয়ার সংখ্যালঘু হিন্দুরা শত গুণ বেশি সুবিধা ভোগ করছে। তার এমন মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলে মালয়েশিয়ার তিন মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার মুসলিমদের সঙ্গে অমুসলিমদের দূরত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন জাকির নায়েক। তিনি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ করেন ওই মন্ত্রীরা।
এ নিয়ে জাকির নায়েকেরে সমালোচনা করে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি জানি না, কে তাকে মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের মর্যাদা দিয়েছেন। তবে রাজনীতি থেকে তার দূরে থাকা উচিত। তিনি ইসলামের ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা বললে আমরা তাকে বাধা দিব না। কিন্তু তাকে অবশ্যই মালয়েশিয়ার রাজনীতি নিয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। চীনা এবং ভারতীয়দের নিজ দেশে ফিরে যেতে বলাটা রাজনৈতিক। তিনি বর্ণবাদী মানসিকতা উসকে দিচ্ছেন।’
জাকির নায়েকের এই বক্তব্য নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে বলেও জানান মাহাথির মোহাম্মদ।
কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের আইনের শাসন আছে এবং আমরা এটার চর্চা করবো।’
এই সব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ১১৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাকির নায়েকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।
জাকির নায়েক স্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে গত তিন বছর ধরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়া নিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিন মন্ত্রী তাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে শান্তি বিনষ্টের অভিযোগও আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মুসলিম, বাকি ৪০ শতাংশ মানুষের অধিকাংশই চীনা ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।