রাসেল পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু এ আসাই যে তার শেষ আসা হবে তা কে ভেবেছিল। ঈদ করতে এসে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে রোববার (১৮আগস্ট) বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাসেল। সে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙালিয়া ইউনিয়নের চরটেকী গ্রামের মরহুম মঞ্জু মিয়ার ছেলে। তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারে বইছে মাতম।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরটেকী গ্রামের রাসেল ঢাকার কালীগঞ্জে ব্যবসা করতেন। মাহিন বারটেক হাইলেট নামের তার একটি প্যান্টের বাটন লাগানোর প্রতিষ্ঠান ছিলো। কোরবানির ঈদ মায়ের সাথে করতে ঈদের আগের দিন বাড়িতে আসে। ঈদের পরদিন মঙলবার হাল্কা জ¦র অনুভব করে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে জ¦রের ওষুধও খায়। কিন্তু জ¦রের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জ শহরে র মিডটাউন প্রাইভেট হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারে সে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। ওইদিনই ভর্তি হয় কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে গত রোববার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মারা যান রাসেল। সোমবার যোহর নামাজের পর চরটেকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে রাসেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে স্তব্ধ পুরো বাড়ি। রাসেলের মারা যাওয়ার খবর শুনে দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয় লোকজন তাদের বাড়িতে এসেছেন। রাসেলের মা ও স্ত্রীকে শান্তনা দিচ্ছেন কেউ কেউ। ঘরের এক কোনে তিন মাস বয়সী বাচ্চাকে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রয়েছেন রাসেলের স্ত্রী মুন্নী।

রাসেলের মা আঙ্গুরা খাতুন বলেন, তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সোহেল সৌদিআরব থাকেন। ছোট ছেলে রাসেল ঢাকায় একটি ছোটখাটো ব্যবসা করতো। ঈদে বাড়িতে এসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাসেলের মৃত্যু হয়। এতে পুরো পরিবার শোকে স্তব্দ। তিনি আরও বলেন, ১২বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। এখন হারালাম ছেলেকে। এত কষ্ট সইবো কি করে।

রাসেলের স্ত্রী মুন্নী জানান, রোববার সকালে মুঠোফোনে রাসেলের সাথে তার শেষ কথা হয়। ওই সময় রাসেল তাকে বলে, ‘আমি আর বাঁচব না, আমার জন্য দোয়া কর। কোন দাবি-দাওয়া রেখো না।’ বিকেলেই খবর পাই উনি (রাসেল) আর নেই। তিনি আরও জানান, ২০০৯সালে তাঁদের বিয়ে হয়। মাহিন নামে আট বছরের এক ছেলে ও তিন মাস বয়সী মাহিয়া নামে এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। রাসেল এভাবে অকালে চলে যাবে ভাবতেও পারিনি। অভাবের সংসার, ছেলে-মেয়ে নিয়া আমি এখন কিভাবে চলব।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031