তুমুল আলোচনা মার্কিন কংগ্রেসের দুই মুসলিম নারী সদস্যকে নিয়ে । তাদের একজন রাশিদা তৈয়ব। অন্যজন ইলহান ওমর। তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু পরে ‘মানবিক কারণে’ ইসরাইলে প্রবেশের অধিকার দেয়া হয় রাশিয়া তৈয়বকে। বলা হয়, তিনি তার গ্রামে নিকটআত্মীয়দের সঙ্গে শুধু সাক্ষাত করতে পারবেন। ইসরাইলে অবস্থানকালীন তিনি ‘বর্জন’ বিষয়ক কোনো ইস্যুতে যোগ দিতে পারবেন না। ইসরাইল সরকারের এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিদা।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
রাশিদা বলেছেন, ইসরাইলি সরকারের
‘নিপীড়নমূলক শর্তের’ অধীনে তিনি দখলীকৃত পশ্চিততীর সফরে যাবেন না। এখানে
উল্লেখ্য, রাশিদা তৈয়ব ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। এখন
তার বয়স ৪৩ বছর। তার শিকড় ফিলিস্তিনে ইসলাইল দখলীকৃত পশ্চিমতীরের বেইত উর
আল ফাউকা গ্রামে। সেখানে এখনও তার ‘গ্রান্ডমাদার’ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের
বসবাস।
তিনি তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন টুইটারে। এর একদিন আগে তার ও ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে ইসরাইলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ইসরাইল সরকার। কারণ, তারা দু’জনেরই একটি বর্জন বিষয়ক আন্দোলনে যোগ দেয়ার কথা ছিল। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল, যাতে ফিলিস্তিনিদের নির্যাতনের অধিকার হারায় ইসরাইল। তবে বিতর্কিত আইনে ‘বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশন (বিডিস)’ আন্দোলন ইসরাইলে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।
এ অবস্থায় মার্কিন কংগ্রেসের দুই নারী মুসলিম সদস্যকে নিষিদ্ধ করার পর ইসরাইলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরিয়ে দেরি বলেন, পশ্চিমতীরে নিজের ‘গ্রান্ডমাদার’কে দেখতে মানবিক কারণে সফর করতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে রাশিদা তৈয়বকে। এক্ষেত্রে আইন প্রণেতারা তাকে একটি লিখিত চিঠি দিয়েছেন। তাতে তারা বলেছেন, ইসরাইলে অবস্থানকালীন রাশিদাকে আরোপিত শর্তগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলে অবস্থানকালে ‘বয়কট’ বিষয়ক কোনো আন্দোলনে জড়িত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাশিদা।
কিন্তু এর পরই শুক্রবার টুইট করেছেন রাশিদা। এতে তিনি বলেছেন, এমন শর্তের অধীনে তিনি সফরে আসুন এমনটা চান না তার ‘গ্রান্ডমাদার’। রাশিদার নিজের ভাষায়, ‘তিনি চান না আমার কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হোক এবং আমার সঙ্গে একজন অপরাধীর মতো আচরণ করা হোক। এতে আমার ভিতরের একটি অংশকে হত্যা করা হবে। আমি বিশ্বাস করি বর্ণবাদ, নিষ্পেষণ এবং অবিচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে। কিন্তু এসব নিষ্পেষণকারী শর্তের অধীনে আমার ‘গ্রান্ডমাদার’কে দেখতে যাওয়া হবে আমার সেই আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। যখন আমি (নির্বাচনে) বিজয়ী হই, তখন ফিলিস্তিনি মানুষদের মধ্যে একটা আশা জেগেছিল। তাহলো, তারা যে অমানবিক অবস্থায় রয়েছেন সেই সত্যটা শেষ পর্যন্ত বলার কেউ একজন এসেছে। আমাকে অবমাননার মাধ্যমে ইসরাইলকে সেই আশার আলোটি কেড়ে নিতে দেবো না। আমার ‘গ্রান্ডমাদারের’ প্রতি আমার ভালবাসাকে ব্যবহার করে তাদের নিষ্পেষণ ও বর্ণবাদী নীতির কাছে আমার মাথা নত করতে দেবো না।
এর আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ওই দুই নারী কংগ্রেস সদস্যকে নিয়ে অভিযোগ করেন যে, তারা ইসরাইলকে ঘৃণা করেন। ইহুদি জনগণকে ঘৃণা করেন। এমন কোনো কথা বা এমন কিছু করার নেই, যাতে তাদের মানসিক এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। তাদেরকে যদি ইসরাইলে প্রবেশ করতে দেয়া হয় তাহলে তাতে ইসরাইলের বিরাট এক দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর তাদেরকে ইসরাইলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এতে কড়া নিন্দা ওঠে। কিন্তু রাশিদা তৈয়ব ও ইলহান ওমর বার বার বলেছেন, নীতিগত পার্থক্যের ভিত্তিতে তারা ইসরাইল সরকারের সমালোচনা করেন। তারা ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে ইসরাইল সরকারের সমালোচনা করেন না। ওদিকে ইসরাইল তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর রাশিদা তৈয়ব ওই উদ্যোগকে ইসরাইলের দুর্বলতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর ইলহান ওমর বলেছেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে এটা হলো অবমাননা। নেতানিয়াহুও ট্রাম্পের মতো ইসলাম ভীতিতে আছেন।