এখনো পুরোপুরি জমে ওঠেনি রাজধানীর কাঁচাবাজার কোরবানির ঈদের পর । বাজারগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। সব দোকানও খোলেনি এখনো। তবে সবজির সরবরাহ কমের অজুহাতে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। শসা ও টমেটোসহ কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি এক থেকে দেড়শ টাকায়। টমেটো ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন আসা শিমের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এদিকে, ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দামই বাড়তি।
বড় আকারের ইলিশ হালিতে বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। অবশ্য স্থিতিশীল রয়েছে মুরগির বাজার। কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের পর বেশিরভাগ মানুষ এখনও ঢাকায় ফিরে আসেনি। ফলে রাজধানীর সবজির বাজারগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। পাশাপাশি সরবরাহও কম। এছাড়া বন্যা ও বৃষ্টির কারণে ঈদের আগেই বেশকিছু সবজির দাম বেড়ে যায়। ঈদের পর সবজির সরবরাহ কম থাকায় নতুন করে কিছু সবজির দাম বেড়েছে। তবে কয়েকটি সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে বলে তারা জানান।
বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। বাজার ভেদে পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে শসা। এক মাসের বেশি সময় ধরে এ ৩টি পণ্য এমন দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে নতুন আসা শিম। বাজার ভেদে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কেজি ১০০ টাকা ছোঁয়ার তালিকায় আছে বরবটিও। বাজার ভেদে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। ঈদের আগে বরবটির কেজি ছিল ৬০ টাকা।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা মতিন বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে তুলনায় সবজির দাম খুব একটা বাড়েনি। কারণ গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া বেশির ভাগ মানুষ এখনও ফিরে আসেনি। আমাদের ধারণা, ক্রেতা বাড়লে সব ধরনের সবজির দাম আরো বেড়ে যাবে।
এদিকে, ঈদের আগের দামে বিক্রি হওয়া সবজির মধ্যে করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। ঢেঁড়স, উসি ও ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস। ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। কচুর মুখি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। বাজারে ঈদের আগের মতোই বাজার ও মান ভেদে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। আর দেশি পিয়াজের কেজি আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
এদিকে, কোরবানির পর বাজারে গরু ও খাসির মাংসের চাহিদা কম থাকায়, মাংসের বাজারে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ঈদের আগের মতো ১০৫-১১০ টাকায়।
অপরদিকে বাজারে আসতে শুরু করেছে বড় ইলিশ। বাজারে এক থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ মিলছে। তবে দামটাও চড়া। বিশেষ করে দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশের দাম অনেকটাই মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। বাজার ভেদে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০-২২০০ টাকায়। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ৯০০-১০০০ টাকায়। ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি পিস মিলছে ৬৫০-৭০০ টাকায় এবং ৫০০ গ্রামের নিচের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকায়।
বাজার আসা ফাতেমা বেগম বলেন, কয়েকদিন ধরে শুধু মাংস খাচ্ছি তাই বাজার থেকে কিছু সবজি কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু টমেটো, গাজর, শসা, শিমের যে দাম তাতে মিষ্টি কুমড়া কিনেই বাসায় ফিরছি। তবে দাম খুবই চড়া।