বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সড়কে লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। বেপরোয়া যান চলাচল, জনসাধারণের অসচেতনতাসহ নানা কারণে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। আর এতে কোনো মা হচ্ছেন সন্তানহারা, সন্তান হচ্ছেন এতিম কিংবা কেউ হচ্ছেন বিধবা। সড়কে এমন নৈরাজ্য নিয়ে বছরব্যাপী আলোচনা, আন্দোলন, মানববন্ধন হলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। কোনো কিছুই থামাতে পারছে না মৃত্যুর এ মিছিল। দেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কই হচ্ছে রক্তে রঞ্জিত। গতকালও দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন।

এর মধ্যে ময়মনসিংহে বাসের সঙ্গে প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া টাঙ্গাইলে ২, সোনাইমুড়ীতে ২, নেত্রকোনায় ১, রাজবাড়ীতে ১, সিরাজগঞ্জে ১ ও কুষ্টিয়ায় ১ জন রয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় বাস ও প্রাইভেটকারের মধ্যে সংঘর্ষে একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো দু’জন। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন গৌরীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম। নিহতরা হলেন- নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডীগড় গ্রামের রফিকুজ্জামান (৪৫), তার স্ত্রী শাহীন আক্তার (৪০), তাদের ছেলে নাদিম (১৯) এবং মেয়ে রওনক হাসান (১৩)। রফিকুজ্জামান ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে গৌরীপুরে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই গতকাল সকালে ফিরছিলেন। এসআই নজরুল আরো বলেন, বাসটি যাত্রী নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিল। অন্যদিকে প্রাইভেটকারটি গৌরীপুর থেকে ময়মনসিংহের দিকে আসছিল।

প্রাইভেটকারটির গন্তব্য ছিল টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা। পথে দু’টি যানের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই শাহীন আক্তার নিহত হন। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বাকি তিনজন মারা যান। আহতদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান এসআই নজরুল। নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের তারাই এলাকায় শুক্রবার দুপুরে মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে আবদুুল মান্নান (৬২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো তিনজন। নিহত আবদুুল মান্নান জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা গ্রামের বাসিন্দা।

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের নাগরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আঃ কুদ্দুস মিয়া (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার বেকড়া ইউনিয়নের নাগরপুর-সলিমাবাদ সড়কের নোয়াই নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের পশ্চিম পাশে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি বেকড়া ইউনিয়নের পাছপাড়া গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলম চাঁদ দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বেলকুচিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইব্রাহিম হোসেন (২৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহত ইব্রাহিম উপজেলার শেরনগর গ্রামের মোস্তফা মুন্সীর ছেলে। এ ঘটনায় আহত তার স্ত্রী পারুল খাতুন (২৩) খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও শিশু সন্তান জান্নাত (৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং তার বোন, বোনজামাই, ভাগ্নি ও চালককে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে তার স্ত্রী ও সন্তানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-রামগঞ্জ সড়কে সিএসজি ও জননী নামক একটি বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে ২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপালের ভর্তি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৮টা দিকে জয়াগ বাজারের ভাই ভাই বেকারি নামক রাস্তার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ী থেকে চাটখিলগামী সিএনজি অটোরিকশা জয়াগ ভাই ভাই বেকারির সামনে রাস্তায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা জননী নামক বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় উপজেলার ভাওরকোট গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম (৬৫) ঘটনাস্থলে মারা যান ও পার্শ্ববর্তী চাটখিল উপজেলার নোয়াখোলা গ্রামে মৃত হাসমত উল্যার ছেলে সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. জসিম গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহতরা হলেন, পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরজবাপতি গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩৫), তার স্ত্রী শাহিন আক্তার (৩০), ছেলে জিহাদ (৫), ছেলে জিসান (২)কে চাটখিল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দুর্গাপুরে পিকনিকের বাস উল্টে শামিম রেজা (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। তাদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে দুর্গাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শামিম রেজা মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মো. সফির ছেলে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়তো। পাংশা হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা থেকে মেহেরপুরের দিকে যাওয়ার পথে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দুর্গাপুরে রাত ৩টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকনিকের বাসটি খাদে পড়ে যায়। এ সময় শামিম নামের ছেলেটি জানালা দিয়ে লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে হোসনে আরা (৪৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত চারজন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা সড়কের মিরপুর হালসা বালুচর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর বাড়ি মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের হাউসপুর গ্রামে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় বাসচাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। উপজেলার পূর্বধলা অতকাপাড়ায় শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কে গতকাল সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে পূর্বধলা থানার ওসি তাওহীদুর রহমান জানান। নিহত রতন খাঁ (৩৫) পূর্বধলা উপজেলার ছনধরা গ্রামের সিরাজ খাঁর ছেলে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031