নগরীতে যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন পদ্ধটিতে মামলা ও জরিমানায় অনাগ্রহ ট্রাফিক পুলিশের। ওই পদ্ধতি চালুর প্রায় দুই বছর হলেও এখনো তাদের আগ্রহ পুরনো লাল স্লিপ( কেইস স্লিপ) বইয়ের প্রতি। ওই স্লিপ দিয়ে বেশিরভাগ মামলা ও জরিমানা হচ্ছে। এর পেছনে স্বার্থ জড়িয়ে থাকার অভিযোগের কথা তুলছেন অনেকেই। এক হিসাবে, নগর ট্রাফিক পুলিশের একটি জোনে পস (পিওএস) বা পেমেন্ট অন স্পট মেশিন ব্যবহার করে দৈনিক গড়ে দেড়শো’র ওপরে মামলা করা হচ্ছে। অন্যদিকে অ্যানালগের কেইস স্লিপের মামলা হচ্ছে আড়াইশো’র ওপরে।
পুলিশের তথ্যে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নগর ট্রাফিক বিভাগে চালু করা হয় ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন এন্ড ফাইন পেমেন্ট সিস্টেম।
মামলা, জরিমানা ও অন্যান্য কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিয়ে আসা, পরিবহন মালিক শ্রমিকদের হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার নানা অভিযোগ বন্ধ হওয়া, ট্রাফিক কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশন করাসহ নানা বিশৃঙ্খলা দূর করতে এই পদ্ধতি চালু করে পুলিশের সদর দপ্তর।
সিএমপি ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) উপ কমিশনার হারুন উর রশীদ হাযারী গতকাল বলেন, মূলত নেটওয়ার্কের কারণেই পস মেশিনের মাধ্যমে কার্যক্রম শতভাগ করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে নেটওয়ার্ক দুর্বল। অনেক সময় দেখা যায় সার্জেন্টরা পস মেশিনের মাধ্যমে যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করার সময় যেখানে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, সেখানে গিয়ে প্রসিকিউশনের কাজ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। আরও কয়েকটি কারণে এখনো পুরোপুরি ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন চালু করা যাচ্ছে না।
তবে ঈদের পর নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কাজ করা হবে জানিয়ে হারুন উর রশীদ হাযারী বলছেন, ঈদের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে তাদের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ চালাবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। এতে আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পস মেশিনে ট্রাফিক পুলিশের প্রসিকিউশন কার্যক্রম শতভাগে নিয়ে আসা যাবে। ডিএমপি’র মতো পর্যায়ক্রমে সিএমপি ট্রাফিকেও সকল কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হবে। বর্তমানে পস মেশিনে ৪০ শতাংশ ও কেইস স্লিপে ৬০ শতাংশ মামলা ও জরিমানা হচ্ছে জানান ডিসি হারুন উর রশীদ হাযারী।
মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত কার্যালয়টি থেকেই এখনো পুরোপুরি পস মেশিনে মামলা ও জরিমানা করার বিষয়টির ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাদের নির্দেশনায় উভয় পদ্ধটিতে মামলা ও জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। এটার হার সমানে সমানে রাখার বিষয়ে তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে।
তারা অভিযোগ করেছেন, কার্যালয়টির সিনিয়ররা লাল স্লিপ বইয়ের মাধ্যমে মামলা ও জরিমানার বিষয়ে বেশি জোর দিচ্ছে সার্জেন্টদের। তাদের দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মামলা ও জরিমানা কেইস স্লিপের মাধ্যমে দায়েরের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা আছে।
এটার পেছনে দুটো কারণ দেখিয়ে তারা বলছেন, কেইস স্লিপের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের। কোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে কেইস স্লিপের মাধ্যমে যদি জরিমানা ১ হাজার টাকা করা হয়, ওই যানবাহন মালিক বা চালক ট্রাফিক কার্যালয়ে এসে কাগজপত্র কিংবা গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে তাদের আরও বাড়তি টাকা দিতে হয়। ওই বাড়তি টাকা অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকছে। গুটি কয়েক লোকের কারণে তাদের এ কর্মকান্ডে পুলিশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এসব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ট্রাফিক উত্তর ও বন্দর বিভাগের কার্যালয়টিতে।
অন্য কারণটি হচ্ছে, পস মেশিনের মাধ্যমে সার্জেন্টদের একটি মামলা ও জরিমানা করার ক্ষেত্রে ৭/৮ মিনিট সময় লাগছে। তথ্য প্রযুক্তিতে অনভিজ্ঞ থাকার পাশাপাশি নেটওয়ার্কের কারণে এ সমস্যাটি হচ্ছে। এসব কারণে মূলত ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশনে মামলা ও জরিমানার হার কম বলে জানান তারা।
এদিকে সুবিধার কথা জানিয়ে নগর ট্রাফিকে কর্মরত সার্জেন্ট মো. আশরাফ বলেন, এ পদ্ধটিতে কোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে স্পটেই মামলা দায়ের করা যাচ্ছে। একটি ডিভাইস ব্যবহার করে ট্রাফিক পুলিশ সরাসরি বিআরটিএ ডাটাবেস থেকে সংশ্লিষ্ট যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্য যাচাই করে মামলা ও জরিমানা করতে পারছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও এ পদ্ধটিতে সুবিধার কথা বলা হচ্ছে। পরিবহন শ্রমিক নেতা উজ্জল বিশ্বাস বলেন, পস মেশিনের মাধ্যমে মামলা ও জরিমানা কার্যক্রম চালুর ফলে শ্রমিকরা আগে যে হয়রানির শিকার হত, সেটা এখন নেই। এখনো কারও বিরুদ্ধে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সার্জেন্ট কর্তৃক জব্দকৃত যানবাহনের কাগজপত্রগুলো নিয়ে আসতে এখনো চালক-মালিকদেরকে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে।
ডিএমপিতে জব্দকৃত কাগজগুলো কুরিয়ারের মাধ্যমে চালকদের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার কথা জানান তিনি।
যানবাহন ও চালকের জব্দকৃত কাগজপত্রগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি পর্যায়ক্রমে চালুর কথা জানান ডিসি ট্রাফিক।
ট্রাফিক উত্তর বিভাগের তথ্যে, গত জুলাই মাসে বিভিন্ন যানবাহন ও সংশ্লিষ্ট চালকদের পস মেশিনে ৪ হাজার ৯৫৯টি মামলা করা হয় সিএমপি ট্রাফিক উত্তর বিভাগে ট্রাফিক সার্জেন্টরা। এ সময় জরিমানা করা হয়েছে ১১ লাখ ৮০ হাজার ৩৫০ টাকা।
এর আগের বছর একই মাসে কেইস স্লিপের মাধ্যমে ৭ হাজার ৬৪১টি মামলা ও ৩২ লাখ ৮৫ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে পস মেশিনে করে ৩ হাজার ৮১৭ টি মামলা ও ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে ২০১৫ সালে ডিএমপিতে প্রথম চালু করা হয় ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন। বর্তমানে ডিএমপিতে শতভাগ মামলা ও জরিমানাসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে ওই পদ্ধতিতে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |