ঢাকা ও দিল্লি একসঙ্গে কাজ করবে মাদক পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে ।এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৭ম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দিল্লি সফররত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তি মতে, দিল্লীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ্।
আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। আলোচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মত দায়িত্ব পাওয়ায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে ভারত সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উভয় মন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, যেটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছিল তা স্মরণ করেন এবং তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দু’দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য, ধর্ম নিরপেক্ষতা, উন্নয়ন সহযোগিতা ও অন্যান্য সব বিষয়ে গভীর মিল রয়েছে এবং দুই দেশের সুপ্রতিবেশিমূলক সম্পর্ক পৃথিবীর মধ্যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলে তাঁরা মনে করেন।
নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ সকল বিষয়ে দু’দেশ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে মন্ত্রীদ্বয় সভায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এ উদ্দেশ্যে দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার উপর গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশের সীমান্ত বা ভূমি ব্যাবহার করে কোন সন্ত্রাসী, জঙ্গী, ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী যাতে ভারতসহ অন্য কোন দেশের ক্ষতি সাধন করতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহীত নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।
আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার কথা দুই মন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নাগরিকদেরকে নিরাপদে ও দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবসানে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
২০১৭ সাল থেকে ৪ কিস্তিতে ভারত সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মায়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহযোগিতা প্রদান করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি অমিত শাহ্কে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মোঃ শহিদুজ্জামান, আইজিপি ড. মোঃ জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সোহাইল হোসেন খান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহম্মেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবুবকর সিদ্দীক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক নীলিমা আক্তার, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মোঃ হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জনাব মোঃ তারেক প্রমুখ ছিলেন। আর ভারতীয় দলে ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই, ইউনিয়ন স্বরাষ্ট্র সচিব রাজিব গৌভা ও সচিব (সীমান্ত ব্যবস্থাপনা) বি আর শর্মা প্রমুখ।