৩০ মে : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর মান একেবারে নিম্ন পর্যায়ে বলে মন্তব্য করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ছয় বারের সভাপতি মরহুম শামসুল হক চৌধুরীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (৩০ মে) শামসুল হক স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে আইনজীবী সমিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন- প্রবীণ আইনজ্ঞ ড.কামাল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, সুব্রত চৌধুরী,শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ।সভা পরিচালনা করেন শামসুল হক স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবিএম বায়েজীদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রকৃতপক্ষে ভালো আইনজীবীর দরকার। ভালো আইনজীবী হতে হলে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এখন কিন্তু ভারতে বেস্ট স্টুন্ডেন্টরা ল’তে (আইন বিষয়ে) অ্যাডমিশন নেয়। আমেরিকাতে হচ্ছে, জাপানে হচ্ছে। আমাদের এখানে প্রকৃতপক্ষে একেবারে যদিও রিসেন্টলি ডেভেলপ করছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি (আইন বিভাগ) ভালো ছেলে মেয়ে বের করছে। তা করছে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ও চিটাগাং ইউনিভার্সিটি। কিন্তু যে সব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো আছে, সেগুলোর মান একেবারে নিম্ন পর্যায়ে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ভারতের ইউনিভার্সিটিগুলোর ‘ল’ সিলেবাস সবগুলো কিন্তু বার কাউন্সিল করে দিচ্ছে। আমাদের দেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলো ইচ্ছামতো সিলেবাস ইয়ো (প্রণয়ন) করে, কোনো স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেইন করা হয় না। এখন কিন্তু এ ডিজিটালাইজেশনের জামানায় আইন কিন্তু……ডিজিটাল ল’, সায়েন্টিফিক ল’, এগুলো কোনো ল’ কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয় না।’
ড. কামাল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানসহ আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন,‘ভালো আইনজীবী হতে হলে ভালো ল’ কলেজ দরকার। ভালো সিলেবাস দরকার। ভালো শিক্ষা দরকার। আপনারা এটা ইয়ো (দেখভাল) করেন। যতো ল’কলেজ ইউনিভার্সিটি আছে এটার সিলেবাসগুলো আপনার ইয়ো (ঠিক করেন) করেন।
নতুন আইনগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব মামলা (নতুন আইনে মামলা) আছে, এগুলো পড়ানো হয় না। আমি নিজে বিচার করি। কিন্তু আমি নিজে পড়িনি। আমাদের ইনক্যাম ট্যাক্স একটা বড় সাবজেক্ট। ভ্যাট। এগুলোর ম্যাক্সিমাম মামলা হচ্ছে। এগুলো (বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে) পড়ানো হচ্ছে না। ইন্ডিয়াতে করপোরেট ল’, ইনকাম ট্যাক্স ল’ আলাদা পড়ানো হচ্ছে। ডিজিটালাইজেশেনের ব্যাপারে আলাদা আলাদা ব্রাঞ্চ হয়ে গেছে। আমাদের এখানে সেগুলো হচ্ছে না।
এ বিষয়ে আইনজীবীরা অগ্রণী ভূমিকা নেবেন বলে প্রধান বিচারপতি আশা প্রকাশ করেন।
বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ‘পূর্ববর্তী অনেক বক্তা আইনের শাসন রুল অব ল’, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারি নিয়ে কথা বলেছেন। আইনের শাসন রুল অব ল’, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারি কোনোটাই বা বায়ন হবে না, যদি স্ট্রং বার (আইনজীবী সমিতি) না থাকে। স্ট্রং বার না থাকলে ভালো বিচারকও হবে না। কারণ হলো সুপ্রিম কোর্টের বেশির ভাগ বার থেকে বিচারক হয়।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তাই আপনাদের সবচেয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে দেশটাকে ভালো পর্যায়ে নিতে হলে, দেশের যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে, দেশে যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে বিদেশের কোনো বিনিয়োগ এখানে আসবে না। যে বিদেশ থেকে এখানে আসবে বিনিয়োগ করতে, সে প্রথমে দেখবেই এ দেশে আইনের শাসন কি রকম, এই দেশে আমি যে টাকা বিনিয়োগ করবো, এটা তুলে নিতে নিশ্চয়তা আছে কিনা। এ দেশে যে মামলাগুলো আছে সে গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে কিনা, কারণ আমি যদি মামলাতে পড়ে যাই আমার টাকাটা আটকে যাবে কি না।’