কূটনীতির ইতিহাসে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজই ভারতের প্রথম কূটনীতিকে আমজনতার কাছে নিয়ে এসেছিলেন । পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি এক নতুন ধারার সূচনা করেছিলেন সাউথ ব্লকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মানবিক মুখে পরিণত করেছিলেন। টুইটারকে তিনি হেল্প লাইনে পরিণত করেছিলেন। মানুষের ছোটখাটো সমস্যাকেও তিনি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করেছেন বহু সময়েই। বিদেশের মাটিতে কোনও ভারতীয় নাগরিক বিপদে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেকথা জেনে সুষমা স্বরাজ সব সময় ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য ভারতে আসার প্রয়োজন হলে দুরারোগ্য পাকিস্তানি রোগীর ভিসার ক্ষেত্রেও দরাজ ছিলেন মানবিক সুষমা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম তাকে ‘সুপারমম’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।
মঙ্গলবার রাতে এইমসে জীবনাবসান হয়েছে ৬৭ বছর বয়সী ভারতীয় জনতা পার্টির সমাজতান্ত্রিক ধারার এই নেত্রীর। দিল্লি সরকার সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে দিল্লির প্রথম এই মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই দিনের শোক পালন করছে। অসাধারণ বাগ্মী ও জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন তিনি। মতাদর্শে পার্থক্য থাকলেও বাগ্মী সুষমা স্বরাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন ভারতীয় রাজনৈতিক মহল। দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছেই তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে সকলেই তার বাগ্মীতা ও গ্রহণযোগ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে সুষমা স্বরাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ভারতীয় রাজনীতির গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। অসাধারণ নেত্রীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে টুইটে প্রধানমন্ত্রীকে কাশ্মীর-প্রসঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, এই দিনটা দেখার জন্য তিনি জীবনভর অপেক্ষা করেছিলেন। প্রথম নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভায় সুষমা একজন তারকা মন্ত্রী ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রতিবেশি দেশগুলি, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে অন্যতর উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বছর দু’য়ের আগে তার কিডনি পরিবর্তন করতে হয়েছিল। তার পরেও তিনি সুস্থ হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে গত নির্বাচনে শারীরিক কারণেই তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।
১৯৫৩
সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সুষমার জন্ম। সংস্কৃত ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথমে এবং পরে
আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। বিয়ে
করেছিলেন সহকর্মী আইনজীবী স্বরাজ কৌশলকে। তাদের একমাত্র মেয়েও আইনজ্ঞ।
অখিল
ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদে হাতেখড়ি হয়েছিল রাজনৈতিক জীবনে। জয়প্রকাশ
নারায়ণের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে যোগ
দিয়েছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। ভারতীয় রাজনীতির মঞ্চে সুষমা অনেক
ক্ষেত্রেই ‘সর্বপ্রথম’। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে হরিয়ানায় বিধায়ক হয়েছিলেন।
সর্বকনিষ্ট হিসেবে হরিয়ানার মন্ত্রীও হয়েছিলেন। তিনি দিল্লির প্রথম মহিলা
মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৮-এর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অবধি তিনি এই দায়িত্বে
ছিলেন। ১৯৯০ সালে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ দিল্লি থেকে
জয়ী সাংসদ সুষমা ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর ১৩ দিনের সরকারের তথ্য ও
সম্প্রচার মন্ত্রী। ১৯৯৮-এ আবার সাংসদ হয়ে আরও একবার তথ্য ও সম্প্রচার
মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। সুষমা স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী
হিসেবে ভারতজুড়ে ছ’টি এইমস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর
প্রধানমন্ত্রিত্বে এনডিএ সরকারে ৫ বছর টানা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
ইন্দিরা গান্ধীর পরে এই পদে সুষমাই দ্বিতীয় মহিলা রাজনীতিক। তবে সুষমা
স্বরাজ ভারতীয় রাজনীতিতে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন একজন দৃঢ় ও নমনীয় ব্যক্তিত্ব
হিসেবে। সবার উপরে তিনি ছিলেন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে এক অনন্য
নারী।