আত্মহত্যা ২০১৬ সালে ভারতে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান একটি কারণ ছিল । গবেষণা বলছে, ভারতীয় পুরুষদের সহিংস মনোভাব, বাল্যবিবাহ, পিতৃশাসিত সমাজব্যবস্থা এই দুরবস্থার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। তাই আজ বিশ্বে প্রতি পাঁচজনে দুইজন নারী আত্মহত্যাকারী ভারতীয় নাগরিক। যদিও এই সংখ্যা নব্বই এর দশকের সাথে তুলনা করলে কিঞ্চিৎ কম তবে তা যথেষ্ট নয়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ ভারতীয় নারী এই ভাগ্য বরণ করে নিচ্ছে।
ভারতের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক পুনম মুর্তেজা এ বিষয়ে বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ভারতে মেয়েরা কতটা শ্বাপদসংকুল পরিবেশে আছে। এখনো ভারতের পাঁচ ভাগের এক ভাগ মেয়েরা ১৫ বছরের আগেই বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় একইরকম ভৌগলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার একটি দেশের সাথে তুলনা করলে ভারতীয় নারীদের মধ্যে এই আত্মহত্যার পরিমাণ প্রায় তিনগুণ। আমাদের সামাজিক নিয়ম-কানুন এখনো পশ্চাদমুখী। গ্রামাঞ্চলে একটি মেয়েকে শৈশবে বাবার উপর, কৈশোরে স্বামীর উপর এবং একটা সময় তারই পুত্রসন্তানের উপর নির্ভর করতে হয়। পুনম মুর্তেজা দাবি করেন তাদের জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ মহিলা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন তাদের স্বামীদের অধিকার আছে তাদেরকে নিয়মিত প্রহার করার।‘
অর্থনৈতিক পরাধীনতা, দাম্পত্যে সহিংসতা, অল্পবয়সে মাতৃত্বকালীন দায়িত্ব পালন, সামাজিক মর্যাদাহীনতা; ভারতীয় নারীদের আত্মহত্যা এবং বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে রেখেছে। ভারতীয় নারীদের এই আত্মহত্যার প্রবণতা এখন অনেকটা জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। কেননা কেবলমাত্র ২০১৬ সালেই দুই লক্ষ ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
ভারতীয় নারীদের এই আত্মহত্যা প্রবণতা প্রতিরোধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে নারী আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য সংস্থাটির ঐ পরিচালক।