কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় নেই এই খাতের অর্থাৎ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরের মধ্য দিয়ে সে দেশে জনশক্তি রপ্তানির যে সম্ভাবনা দেখছেন তারা, তাতে প্রবাসীক্যলাণ মন্ত্রীর না থাকাটা প্রশ্ন ও কৌতূহলের উদ্রেক করে।
তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম দেশে ফিরবেন আগামী ৪ জুন, যেদিন প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব রওনা হবেন। তাই তিনি সফরসঙ্গী হতে পারছেন না।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীকে আসলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কেননা প্রধানমন্ত্রী চাইলে নুরুল ইসলাম বিএসসি অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি সৌদি আরব গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরে যোগ দিতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রীর অনেক সফরে এমন ঘটনা এর আগে বহু আছে। কিন্তু সৌদি সফরে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।
নুরুল ইসলাম বিএসসিকে এই সফরে এড়িয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা জানায় সূত্র। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার স্বভাবিক করতে না পারা, প্রধানমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত সৌদি সফরের সময় ব্যক্তিগত সফরে মন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া যাওয়া।
আর একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলী তৎপরতার কারণে বাদ পড়েছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী। কেননা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এ সফরে সৌদির শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হলে এর কৃতিত্ব নিতে চাইছেন তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সাংবাদিক ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির না-থাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, “মন্ত্রী ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়া আছেন। তিনি ৪ জুন ঢাকায় ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রীও ৪ জুন সৌদি যাবেন। ফলে মন্ত্রী যোগ দিতে পারছেন না। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
সূত্র জানায়, সৌদি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির বাদশাহসহ শীর্ষ নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও সন্ত্রাস দমনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা উঠে আসবে। জেদ্দায় পৌঁছানোর পর ৫ জুন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে সৌদিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করা, বিনিয়োগ ও সন্ত্রাসবাদ দমনসহ অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে উভয় নেতার মধ্যে আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্য দিয়ে সেখানকার শ্রমবাজার বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হতে পারে। বাড়তে পারে বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতাও। সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে নিশ্চিত করেছে কূটনৈতিক সূত্র।
এর আগে ২০০৯ সালে দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত কয়েক বছরে ঢাকা ও রিয়াদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও সফর হয়েছে। সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। সেখানে আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তির বিপুল চাহিদা রয়েছে। সৌদিতে আরো বেশি জনশক্তি রপ্তানির জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ২৫ লাখের বেশি কর্মী সেখানে গেছেন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে সৌদি আরব সরকার বাংলাদেশের শ্রমিকদের ভিসা দেয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়। এতে পুরো শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। জনশক্তি রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের প্রথম দিকে সৌদি আরব সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সৌদির তৎকালীন বাদশার সাথে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানান। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন কয়েক দফা সৌদি আরব সফর করেন।
এসব প্রচেষ্টায় ফল হিসেবে গত বছর বাংলাদেশী পুরুষ কর্মীদের জন্য আংশিকভাবে উন্মুক্ত হয় সৌদি আরবের শ্রমবাজার। নারী কর্মীর সঙ্গে গৃহশ্রমিক কোটায় শর্তসাপেক্ষে পুরুষ কর্মী নেয়া শুরু করে দেশটি। পুরুষ গৃহকর্মীরাও নারীদের মতো বিনা খরচেই সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে সে দেশে চার লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়।