বাংলাদেশের একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা হচ্ছে শিশুশ্রম। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে শতভাগ শিশুশ্রম নির্মূল সম্ভব না। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মতৎপরতার পরেও আমাদের দেশে এখনও অনেক শিশু বেঁচে থাকার তাগিদে শ্রমে নিযুক্ত হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকায় আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন: প্রেক্ষাপট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ও ইসলামিক রিলিফ সেমিনারটির আয়োজন করে। সেমিনারে বক্তার বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সবধরণের শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধের কথাও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের জন্যই শিশুশ্রম শতভাগ নির্মূল সম্ভব না। আর করা ঠিকও হবে না। তবে আমাদের নূন্যতম শিক্ষার ধাপ আরও বৃদ্ধি করে করা দরকার।
সুশিক্ষিত জাতিগোষ্ঠীই পারে শিশুশ্রমের কুফল থেকে আমাদেরকে বের করে আনতে।  দেশের সরকার ও সরকার প্রধান শিশুশ্রম নিরসনের ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তৎপর না হলে এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে। সরকারের উচিত যেসব এনজিও’র সততা, আন্তরিকতা, অভিজ্ঞতা ও ট্রেক রেকর্ড পরীক্ষিত তাদেরকে শিশুশ্রম নিরসনের কাজে স¤পৃক্তকরা। তিনি আরো বলেন বলেন, গৃহ শিশুশ্রম একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। সময় এসেছে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা পর্যালোচনা করা ও শিশু গ্রহ শ্রমকে উক্ত তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটওয়ারী বলেন, শিশুশ্রম যে একটা সমস্যা সেটা সবাই জানি। আমাদের উচিৎ সমস্যা ও সমাধানের দিকে মনযোগী হওয়া। তিনি মাদক আইনে শিশুদের বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে বলেন, শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদক গ্রহণকারীর ভূমিকায়। তারা ভিকটিম হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেকে জানেও না যে তারা মাদক বহন করছে। তাই আইনে যে তাদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে সেটা পূর্নবিবেচনা করতে হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রেজাউল হক বলেন, ২২টি সেক্টরকে মন্ত্রণালয় চিহ্নিত করেছে এবং সেসব সেক্টরের এসোসিয়েশন সমূহের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে যে, তাদের সেক্টর শিশুশ্রম মুক্ত।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ আকমল শরিফ বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার পর্যালোচনা করা আমাদের প্রয়োজন। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে স¤পূর্ণভাবে শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গিকারবদ্ধ। শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহের উপর বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে করে বিদ্যালয়ে ঝড়েপড়া শিশুর হার কমে আসে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক, এমপি। উক্ত আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটওয়ারী; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রেজাউল হক এবংইসলামিকরিলিফবাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ারকান্ট্রি ডিরেক্টরমোহাম্মদ আকমল শরিফ।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন বিএসএএফ এর পরিচালক আবদুুছ সহিদ মাহমুদ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া প্রমুখ।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031