সরকার বাংলাদেশ থেকে আলুর রপ্তানি বাড়াতে ‘চুক্তি ভিত্তিক চাষ (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং)’ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষক সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে আলু বিক্রি করতে পারবে। এক্ষেত্রে কৃষকদের ঠকতে হবে না মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। তারা পাবেন ন্যায্যমূল্য। এবিষয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের রোগতত্ত্ব ও কৃষিবিদ সৈয়দ মুনিরুল হক বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ প্রথা বিলুপ্ত করে বিদেশে আলু রপ্তানিতে আরো গতি আনতেই চুক্তি ভিত্তিক চাষ পদ্ধতিতে যাচ্ছে সরকার।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিশ্বের ১০টি দেশে আলু রপ্তানি হচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে ১০টি দেশে ৩২ হাজার ১০ দশমিক ১৬২ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। আলু রপ্তানি করা দেশগুলো হলো সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, আরব আমিরাত, মালেয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ব্রুনাই, বেনিন ও ভিয়েতনাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে অনুমোদন সাপেক্ষে এসব আলু রপ্তানি করা হয়।
দেশের রংপুর, লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এসব আলুর ফলন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট দুইটি সমুদ্র বন্দর, তিনটি বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর, একটি নৌবন্দর ও কমলাপুরের আইসিডি’র মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে সরকার বাণিজ্য সমপ্রসারণে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও কয়েকটি স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রতি বছর আলুর উৎপাদন বাড়ছে। প্রায় ৩০টি জাতের আলুর চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে। ধান ও গমের পর বিশ্বে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় প্রধান ফসল। আলু বিশ্বের ৪০টি উন্নত দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিত। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে আলু রপ্তানিতে নজর দিচ্ছে সরকার। দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টনের মতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আলুর উৎপাদন এক কোটি টনেরও বেশি হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় রপ্তানি হচ্ছে কম।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, আলুর অধিক ফলন হয় এমন জেলায় উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে আলু চাষীদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে। তালিকা মতে নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে, চাষীর আলু উৎপাদনের জমির পরিমাণ, কে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করেন, আলুতে কোনো প্রকার পোকা-মাকড় বা রোগ আছে কিনা- শুরু থেকেই এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কৃষক সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রি করতে পারবেন উল্লেখিত পদ্ধতিতে।
কৃষিবিদ সৈয়দ মুনিরুল হক জানান, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় ব্যাপক পরিমাণ আলু রপ্তানি হতো ক’বছর আগেও। কিন্তু গত ৪-৫ বছর ধরে রাশিয়ায় আলু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। ইউরোপসহ রাশিয়ায় আলু রপ্তানির দুয়ার খুললে আমাদের দেশের কৃষক একদিকে যেমন পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে তেমনি অন্যদিকে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে গেলে কোন পণ্য কোন এলাকায় উৎপাদন করা হয়, সেখানে ওই পণ্যের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগজীবাণু আছে কিনা তার সব তথ্য উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে রপ্তানি করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। এ জন্য কোন পণ্য কোন দেশে রপ্তানি করা হবে তা নির্ধারণ করে ওই দেশের আমদানি চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি পর্যায়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গুণগত মান নিশ্চিত করতে হয়।
মূলত: এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের সহায়তায় কিছু পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ এর মাধ্যমে উৎপাদন করার প্রস্তুতিতে সরকার রয়েছে বলেও জানান এ কৃষিবিদ।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031