‘ছেলেধরা’ সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা যুবক কথা বলতে পারতেন না নারায়ণগঞ্জে । আর শিশুর সামনে কেন- এই প্রশ্নের জবাব দিতে না পারায় তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। অথচ তিনি তার নিজের মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন।

আর একটি শিশুকে পুতুল দেওয়ার পর বেদম পেটানো হয়েছে এক নারীকে। তিনি মানসিক রোগী বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত সিরাজ মিয়া বাক প্রতিবন্ধি এবং পিটুনির শিকার নারী রেশমা একজন মানসিক প্রতিবন্ধী।’

শনিবার সিরাজকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর রেশমাকে পেটানোর সময় উদ্ধার করতে গিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়াতে হয়েছে পুলিশকে। এই ঘটনায় দুটি মামলার পর গতকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে আগের দিনের ঘটনায় তাদের অনুসন্ধান জানান এসপি হারুন।

পদ্মাসেতু নিয়ে ছড়ানো উদ্ভট তথ্যের মধ্যে দেশজুড়ে চলছে গণপিটুনির ঘটনা। শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা এবং এক নারীকে গুরুতব আগত করে স্থানয়ীরা।

এসপি হারুন বলেন, ‘ ফতুল্লাতেও গুজব ছড়িয়ে একজনকে মারধর করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি কারা এসব গুজবে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

মেয়ের প্রতি ভালোবাসা কাল হলো সিরাজের

সিদ্ধিরগঞ্জে নিহত যুবক উপজেলার ৫নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা আবদুর রশিদ মণ্ডলের ছেলে সিরাজ মিয়া।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জোনের পরিদর্শক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, ‘শনিবার সকালে ঘটনার পরেই আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করি।’

‘পিবিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ জোনের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, আমি ও সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ এস আই সাখাওয়াত সুলতান ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে নিহতের ফিঙ্গার প্রিন্টসহ অনুসঙ্গ পরীক্ষা করে পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি।’

নিহতের পরিবারের জানায়, সিরাজের ৬/৭ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী তাকে ছেড়ে বিয়ে করেছেন আরেকজনকে। নিয়ে গেছেন মেয়েকে। সিরাজ জানতে পারেন, আলামিন নগর এলাকায় তার স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে থাকেন। মেয়েকে এক নজর দেখার জন্য ওই এলাকায় মাঝে মধ্যে ছুটে যেতেন বাক প্রতিবন্ধী যুবকটি। আর সেটিই কাল হয়েছে তার।

সিরাজের মেয়ের সম বসয়ী একটি মেয়ের সঙ্গে তাকে দেখে প্রশ্ন করতে থাকে স্থানীয়রা। কিন্তু জবাব দিতে পারেননি তিনি। মুহূর্তেই শুরু হয় পিটুনি।

একই এলাকায় পুলিশের ভূমিকায় গণপিটুনির আরেক শিকার রেশমা বেঁচে যান। তিনি পাইনাদী নতুন মহল্লার শাপলা চত্ত্বর এলাকায় খাদিজা নামে একজনের ফ্লাটে গিয়ে তিন বছর বয়সী শিশু নাদিমকে পুতুল দেন। কিন্তু তাকে কেউ চিনতে পারছিল না।

খাদিজার পরিবার বাড়িওয়ালাকে খবর দেয়। আর বাড়ির সামনে জড়ো হয় স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে রেশমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে পিএম এর মোড়ে আল বালাগ স্কুলে আটকে রাখে।

খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করতে যায়। সেখানে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে আধা ঘণ্টাব্যাপী তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ওই নারীকে হাসপাতালে পাঠায়।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031