স্বীকার করেছেন বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা পুলিশের কাছে । আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন। তবে রিফাতকে হত্যা নয়, ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন মিন্নি!
পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার মিন্নির রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছে মিন্নি। ইতিমধ্যেই মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। মিন্নি এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
জানা যায়, রিফাত শরীফকে ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। কারণ সে নয়ন বন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এজন্য রিফাতকে ‘শিক্ষা’ দিতে নয়ন বন্ডকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মিন্নি। সে অনুযায়ী সাজানো হয়েছিলো ছক।
ঘটনার দিন ছক অনুযায়ী কলেজ গেটে কালক্ষেপণ করে মিন্নি।
তবে রিফাতকে ‘শিক্ষা’ দেয়া যে হত্যায় রূপ নেবে তা মিন্নির ধারণায়ও ছিল না। সেজন্যেই ঘটনার দিন যখন রিফাতকে নয়ন বন্ডের ‘০০৭’ গ্রুপের সদস্যরা টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়, তখন মিন্নিকে নির্লিপ্তভাবে হাটতে দেখা যায়। মিন্নি ভেবেছিলেন নয়ন বন্ডরা তাকে সামান্য শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেবে। কিন্তু মারধরের একপর্যায়ে হঠাৎ যখন নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী চাপাতি দিয়ে অতর্কিতভাবে রিফাতকে কোপাতে থাকে, তখনই মিন্নি ঝাপটে ধরে রিফাতকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয় মিন্নি।
ঘটনার আগের দিন রাতে নয়নের সঙ্গে মিন্নির প্রায় ১৫ মিনিট কথা হয়। সেই সূত্র ধরেই ১৬ই জুলাই মিন্নিকে বরগুনা সদরের নিজ বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। প্রায় ১৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এদিকে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তৃতীয় আসামি রিশান ফারাজীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে কোথা থেকে রিশানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে তা জানায়নি পুলিশ। রিশান বরগুনা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি রোডের দুলাল ফরাজীর ছেলে এবং এই মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজীর ছোট ভাই।
তারও আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও পুলিশের কৌশলী এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী
মিন্নিসহ এখন পর্যন্ত ১৬ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়াও
মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
হয়েছেন। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১০ জন রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা
স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও এ মামলার
চারজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছেন।