বাংলাদেশের অন্তত ৫০ নটিক্যাল মাইল অভ্যন্তরে ঢুকে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরছে বলে অভিযোগ উঠেছে বঙ্গোপসাগরের আন্তর্জাতিক সীমা বা ইনোসেন্ট প্যাসেজ পেরিয়ে । বিশেষ করে বাংলাদেশে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ভারতীয় মাছ ধরার কয়েকশ অত্যাধুনিক ট্রলার এখন এই সমুদ্রসীমা চষে বেড়াচ্ছে।
দেশীয় জেলেদের অভিযোগ, প্রতিবছর ইলিশের ভরা মৌসুমে এবং ইলিশ ধরায় বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার সময় দেশের জলসীমার অন্তত ১১০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অবাধে ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা। আর তাদের রক্ষায় মহল উঠেপড়ে কাজ করছে একটি পক্ষ।
কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী বাহিরে গিয়ে অবৈধ ভাবে ঢুকে পড়া জেলেদের রক্ষায় মরিয়া একটি মহল অভিযোগ দেশীয় জেলেদের ।
বাংলাদেশি জেলেদের ক্ষোভ সাগরে মাছ ধরতে না পেরে আর্থিক কষ্টে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। এ রকম অভিযোগের মধ্যেই বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে ভারতীয় ৩২টি ট্রলারসহ ৫শোর বেশি জেলে।
অন্যদিকে, বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে পড়ে এক ভারতীয় জেলেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি জাহাজের নাবিকরা।
বাংলাদেশের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮শ ১৩ বর্গ কিলোমিটার জলসীমার মধ্যে তীর থেকে ৩৬৭ কিলোমিটার বা ২০০ নটিক্যাল মাইলকে বলা হয় অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমা।
মূলত এখানেই বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পায়। এর বাইরে আন্তর্জাতিক সীমা বা ইনোসেন্ট প্যাসেজে দু’দেশের নৌকা কিংবা ট্রলারগুলো যেতে পারলেও মাছ ধরার সুযোগ নেই।
কিন্তু জেলেসহ বোট মালিকদের অভিযোগ, গত ২০ মে থেকে বাংলাদেশ সীমানায় মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারীর সুযোগে ভারতীয় জেলেরা এখন এ অঞ্চলে অবাধে মাছ শিকার করছে। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকেও মাছ শিকারের অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে।
জেলেরা বলেন, ‘আমাদের দেশে অবরোধ কিন্তু ভারতে অবরোধ নেই। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে বাংলাদেশের ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
বাংলাদেশ বোট মালিক সমিতির মহাসচিব আমিনুল হক বাবুল বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন মাছ আহরণ বন্ধ থাকে তখন বিদেশি ট্রলারগুলো আমাদের দেশে এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম কিন্তু আমরা কোথাও প্রতিকার পাচ্ছিলাম না।’
গত রোববার( ৭ জুলাই) পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে আশ্রয় নেয়া ভারতীয় ফিশিং ট্রলারগুলো মাছ ধরার জন্যই বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেছিলো বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তাদের মতে, ভারতীয় জলসীমা থেকে এ অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ৯২ কিলোমিটার বা ৫২ নটিক্যাল মাইল। আর তাদের নৌকাগুলো ঘণ্টায় ৮ নটিক্যাল বেগে ছুটতে পারে। সে অনুযায়ী অন্তত ৫ ঘণ্টা বোট চালিয়েই তারা এখানে এসেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন সাইসেন্স এন্ড ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হটাত করে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার ফলে নৌকাগুলি যদি তাদের দিক ভুলে যায়, প্রথমে তাদের যাওয়া কথা সাগর আইল্যান্ডের দিকে। কোন কারণে তারা সাগর আইল্যান্ডে যেতে না পারলে তারা জুলফিকার চ্যানেল বা সুন্দরবনের ভিতরে আসবে। পটুয়াখালী আসা টা অস্বাভাবিক।’
তবে স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তার দাবি, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় ভারতীয় জলযানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড কাজ করছে।
উল্লেখ্য,দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সুরক্ষায় আগামী ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। চলতি মাসের ২০ মে থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরের কোনও স্থানেই যান্ত্রিক বা ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে মাছ ধরা যাবে না। মাছ আহরণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বঙ্গোপসাগর ছাড়াও কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর মোহনার জন্যও একই এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
মাছ ধরা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে জেলেদের সড়ক অবরোধ
গত ৯ জুলাই বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে মৎস্যজীবী জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
আজ রোববার সকালে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ৪০টি জেলেপাড়ার নারী-পুরুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।
মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময় গুলোতে সরকার জেলেদের ৪০ কেজি করে চাউল প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়।কিন্তু জেলেরা বলছেন, এটা দিয়ে তারা তাদের পরিবার চালাতে পারছে না। তাই তারা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করছে।
জেলে নেতারা বলেন, মাছ ধরার পেশার সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার জড়িত। অথচ তাদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। মাছ ধরে দৈনিক যা আয় করে তা দিয়েই সংসার চালায় জেলেরা। জেলেদের প্রশ্ন, প্রায় আড়াই মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে এতগুলো পরিবার চলবে কীভাবে?