নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পঞ্চবটি বিসিক নীটওয়ার পণ্য (গেঞ্জি ও টি শার্ট) রপ্তানীতে দেশের সিংহভাগ স্থান দখল করে আছে । বছরে অন্তত ৪০০ কোটি ডলার বাংলাদেশী টাকায় ৩২ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানী হয় এখান থেকে। এখানে নীট পণ্যের ওপর  ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে অসংখ্যা ডাইং ফ্যাক্টরী রং, কেমিক্যাল সূতা, বোতাম কার্টন, পলিসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে,ওভেন আইটেমের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদেশী ক্রেতারা অন্যান্য সামগ্রীর ৬৫-৭০ভাগ বিদেশ থেকেই পাঠিয়ে দেয়। আর নীট পণ্যে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদিত হয় দেশেই। এতে দেশীয় একসেসোরিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে দেদারছে। বাড়ছে কর্মসংস্থান। এছাড়া বর্তমানে পঞ্চবটি বিসিকে প্রায় ৫০০ নীট কারখানায় চাকরী করছেন অন্তত সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ শিল্প শ্রমিক।

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটির প্রতি অযতœ অবহেলার যেন শেষ নেই । শিল্প উদ্যোক্তাদের আশাবাদ, শিল্প এ খাতটির প্রতিবন্ধকতা  চিহ্নিত করে তা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নিলে শুধু পঞ্চবটি বিসিক থেকে বছরে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব হবে।

সরেজমনি গিয়ে দেখা যায়, নীট সম্রাজ্যে নেতৃত্ব দেয়া নারায়ণঞ্জের ফতুল্লা বিসিকি শিল্প নগরী যোগাযোগ ব্যবস্থায় রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। যানবাহন চলাচল পণ্য বহনের ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ-মোক্তারপুর মুন্সীগঞ্জ মূল সড়কটি বিসিক এলাকায় মাত্র ১৮ ফিট প্রশস্থ। উচু নীচু ভগ্ন রাস্তা যেন ভয়ংকর দূর্ঘটনার ফাঁদ। প্রায় সময় পণ্যবাহি যানের স্প্রিং ভেংগে বিকল হয়ে পড়ে থাকা রাস্তায়। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পুরো বিসিকের শিল্প প্রতিষ্ঠানের অলিগলির যত্রতত্র পড়ে আছে বর্জ্য ময়লা। নেই কোন  নির্দিষ্ট ডাস্টবিন। বৃষ্টির দিন কাঁদা আর শুকনো মৌসুমে ধুলেবালিতে নোংরা এক পরিবেশ।

উৎপাদন ক্ষেত্রে অপরিহার্য চাহিদা গ্যাসে রয়েছে তীব্র সংকট। গ্যাসে চাহিদামত প্রেসার না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। ডাইংগুলোতে ওয়াসা চাহিদার ১৫ ভাগ পানিও সরবরাহ করতে পারলেও নিচ্ছে পানির বিল। নিচ্ছে ডিপ বাসানোর টেক্স।

অন্যদিকে রয়েছে প্রভাবশালীদের ঝুট ব্যবসার অজুহাতে জিম্মি করে শিল্পে চাঁদাবাজি। বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে ঝুট না দিলেই নির্দিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানে ধেয়ে আসে শ্রমিক অসন্তোষ। বেশ কয়েক শ্রমিক নেতা নেপথ্যে  থেকেই নিয়ন্ত্রণ করেন এই সেক্টর। তাদের কথামত কাজ না করলেই শুরু হয় কৃত্রিম শ্রমিক অসন্তোষ।

নীট শিল্পের উত্থানের ইতিহাসে জানা যায়, ৮০ দশকে দেশের গার্মেন্ট শিল্পের অভিষেক  হয়ে নব্বইয়ের দশকে এর ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) পরিসখ্যানে বর্তমানে রপ্তানিমুখী নিটওয়্যার শিল্পের সংখ্যা দেড় হাজার। এর ৬০ ভাগই নারায়ণগঞ্জে, বাকিগুলো গাজীপুর ও চট্টগ্রামে অবস্থিত। এর বাইরেও কিছু নিটওয়্যার কারখানা আছে, যারা বিজেএমইএর সদস্যভুক্ত।
এ বিষয়ে কথা হয় বিকেএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি আসলাম সানির সাথে। তিনি জানান, শতভাগ রপ্তানিমুখী নিটওয়্যার পণ্য তৈরীতে যেসব একসেসোরিজ অতিরিক্ত পণ্য ব্যবহার হয় এর ৮০ ভাগ উৎপাদন হয় দেশীয় সামগ্রী। বাকিটা আমদানিকৃত। আর ওভেনে (শার্ট-প্যান্ট) ৬৫-৭০ ভাগই আমদানিকৃত। কিন্তু নীট পণ্য সহায়ক পণ্য আমদানিতে যেমন ডাইস কেমিক্যাল ইত্যাদি আমদানিতে কাস্টমস ও ইনসেনটিভ অডিট ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে পদে পদে। এতে ব্যবসায়িরা নানা হয়রারানির শিকার হচ্ছেন।

তিনি আক্ষেপ করে জানান, পঞ্চবটি বিসিকটি থেকে বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানী করছে নীট শিল্প। কিন্তু সেই বিসিকের পণ্য বহনের সড়কটি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মোক্তারপুর, মুন্সীগঞ্জ সড়কটির বিসিক এলাকায় রাস্তাটি মাত্র ১৮ ফিট প্রশস্ত। এখানে প্রয়োজন অন্তত ৪০ ফিট রাস্তা। এতে যানবাহন যানজট লেগেই থাকে। এর মধ্যে রাস্তা ভাঙ্গা।  
তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি চক্র এখানে শত কোটি টাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে প্রায় সময় কৃত্রিম শ্রমিক আন্দোলন সৃষ্টি করে থাকে। এরা কম মূল্যে ব্যবসা করতে না পারলেই নির্দিষ্ট কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন লাগিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে সিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, বর্তমানে এখানে প্রায় ৫০০ নীট কারখানা রয়েছে। যা সারা দেশের মোট নীট কারখানার এক-তৃতীয়াংশ। এর বাইরে ওভেন গার্মেন্টস, নিটিং, পশ্চাৎ-সংযোগ শিল্প আছে এখানে। এখান থেকে বছরে ৪০০ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানি হয়। এখানে শ্রম দিচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ থেকে ৪ লাখ শ্রমিক। কিন্তু  সমস্যার কথা বললে শুরু হবে তো শেষ হবে না।

তিনি আরো জানান, এত সমস্যা দেখলে বিদেশী ক্রেতারা ফিরে যাবে। এই কারণে বেশ কয়েকটি নীট কারখানা বিদেশী ক্রেতাদের হেলিকপ্টারে বহন করে ছাঁদে থাকা হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। আবার সেখান থেকেই নিয়ে যায়। কারণ এই পরিবেশ দেখলে অর্ডার প্রত্যখাত হতে পারে। কিন্তু এই সামর্থ্য সকলের নেই ।
বিসিকের এই নেতা বলেন,  নীট খাতের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031