এখন ছক বাঁধা বাজেটে পরিণত হয়েছে বাজেট । কাঠামোগত সংষ্কারের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে বাজেট নতুন করে সাজানো দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাজেট ২০১৯-২০ ও নাগরিক ভাবনা’ গোলটেবিল শীর্ষক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যাদের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন হয়ে থাকে, দেশের উন্নয়নের জন্য বাজেট দেয়া হবে আর সেই বাজেটে সাধারণ জনগনের জন্য কিছু থাকবে না এটা হতে পারে না। বাজেট শুধু দিলেই হবে না সেই বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কি আছে সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
তিনি বলেন, আয়-ব্যয়ের হিসাব পেলেও বাজেটে স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বাজেটে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। দরকার মানুষের অবস্থান ও অবস্থানের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো। বিশেষ করে দরকার দরিদ্র মানুষের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের বাজেট হয়ে গেছে অনেকটা ছকবাধা, তাই বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার দরকার বলে আমি মনে করি।
সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে বাজেট নিয়ে সংসদে এত আলোচনা হয় না। কিন্তু বাজেট আলোচনায় প্রান্তিক মানুষের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না।
আমরা দেখেছি, বাজেটে কৃষকের সমস্যা দেখা হয়নি। ধানের উৎপাদন মূল্য কম হওয়ার জন্য ভর্তুকি দেয়ার দরকার ছিল, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ বাজেটে নেয়া হয়নি।
অর্থনীতিবীদ ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, জুন-জুলাই অর্থবছরের সময়সীমা হওয়ায় নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। জুনে বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় প্রকল্প খরচ বাড়ে। পাকিস্তানসহ দু তিনটা দেশ ছাড়াও কোথাও জুন-জুলাই অর্থবছর নেই। তাই এর পরিবর্তন করা দরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের পক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সামর্থ্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
তিনি আরো বলেন, বাজেটের আকার বৃদ্ধি কোনো চমক নয়। এটা বয়স বাড়ার মতো, প্রতিবছর বাড়তেই থাকবে। বরং বিভিন্ন খাতে বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় পরিমাণ ও গুণগত মান ঠিক রেখে তা কতটা বাস্তবায়ন হয় সে বিষয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বাজেটে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকারের আগ্রহ দেখা যায়, অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায় না।
বিআইডিএস
এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ভোগ বাড়লেও কিলোক্যালরি
গ্রহণ কমছে। আমরা দেখছি, চালের ভোগ কমেছে, কারণ সবাই এখন শুধু ভাতের উপর
নির্ভরশীল নয়। তাই সাধারণভাবে কিলোক্যালরি গ্রহণ কমে যাওয়া এখনও
দু:শ্চিন্তার বিষয় নয়। প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে কর্মসংস্থান কমে, তাই
বিকল্প কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বৈঠকে সাবেক সচিব
আব্দুল লতিফ মণ্ডল, জুনাইদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ আল
মাহমুদ তিতুমীর, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বক্তব্য
রাখেন।