এক বছর আগে কিশোরী জান্নাতির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে শিপলুর। সেই প্রেম পরিনতি দিতে পালিয়ে বিয়েও করে তারা। কিন্তু বিয়ের পরে স্বামীর আসল রূপ ধরা পড়ে জান্নাতির কাছে। জানতে পারে, সে মাদক ব্যবসায়ে জড়িত। শুধু স্বামী নয়, বরং তার পুরো পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ এ ব্যবসা করে আসছে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন জান্নাতিকেও মাদক ব্যবসায় নামাতে চেয়েছিলো। কিন্তু এতে সায় ছিলো না তার। বরং বিরোধীতা করেছিলো।
আর সেটাই কাল হলো ষোড়শী জান্নাতির। তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নির্মম এ ঘটনার ৪০দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জান্নাতি। জান্নাতির খুনীদের স্বীকারোক্তিতে ওঠে এসেছে হত্যার এমন লোমহর্ষক বর্ণনা।
জান্নাতি হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ৪জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নাটোর জেলার নারায়নপুর পুকুরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ব্যাপারে আজ বুধবার দুপুরে নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নিহত জান্নাতির শ্বাশুড়ি শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানী (৪৫), স্বামী সাব্বির আহামেদ শিপলু ওরফে শিবু (২৩) ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)। তারা সকলেই নরসিংদী চরহাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন (বিপিএম) বলেন, পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করদেত না পারায় জান্নাতুল ফেরদৌসি ওরফে জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা করে শশ্বড় বাড়ির লোকজন। ঘটনার দিন রাতেই ৬ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল নারায়গঞ্জের রুপগঞ্জ, টঙ্গী, চাপাইনবাবগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে না পেয়ে নাটোর জেলায় অভিযান চালালে মঙ্গলবার রাতে এজাহারভূক্ত চার আসামী মাদক ব্যাবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজই তাদের আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ জানায়, নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ে জান্নাতি আক্তার (১৬) ও আর পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার মধ্যে প্রায় ১ বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই জান্নাতি পরিবারের মাদক ব্যবসায়ের বিষয়টি জানতে পারে। তাকেও পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে শ্বাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তুরাজি করাতে পারেনি জান্নাতিকে। এ কারণে জান্নাতির ওপর চলে কঠোর নির্যাতন। দাবি করে যৌতুকের। দাবির টাকা না দেয়া এবং মাদক ব্যবসায় না জড়ানোয় চলতি বছরের ২১শে এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাশুড়ি ও স্বামী শিপলু জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের সহযোগিতা করে ননদ ফাল্গুনী বেগম। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি তারা।
পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০শে মে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মারা যায় সে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা শরিফুল ইসলাম গত ১৫ই জুন নরসিংদি সদর মডেল থানায় বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।