দৃষ্টিহীন রউফ সরকার সাত বছর ধরে রাস্তার পাশে ছোলা বিক্রি করে চলেছেন । চোখে না দেখতে পেলেও নির্ভুলভাবে ছোলা পরিবেশন করছেন। আর বিষয়টি অবাক করেছেন তাকে প্রথমবার যারা দেখছেন তাদের।

মাত্র ১২ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে দৃষ্টি হারান রউফ। চোখে দেখতে না পেলেও কেবল মনের শক্তিতে ভর করে স্বনির্ভর জীবন যাপন করছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষটি।

গাজীপুরের গাজীপুরা বাসস্টান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে ২৭ রোড। সেখানে কাই এলোমিনিয়াম কারখানার সামনে দেখা মিলবে রউফের। এখানেই রাস্তার পাশে প্রতিদিন ছোলা বিক্রি করেন তিনি। আর তার দোকানে ছোলা খাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

সম্প্রতি এক যুবক আব্দুর রউফের ছোলা বিক্রি করার ভিডিও চিত্র ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরলে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।
ভিডিও চিত্র ধারণকারী যুবক মনির হোসেন গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার বাসিন্দা। মোটরসাইকেল নিয়ে গাজীপুরা এলাকায় গেলে তার নজরে পড়ে রউফের ছোলার দোকান।

ভিডিওতে দেখা যায়, চোখ না দেখতে পেয়েও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শশা, কাঁচামরিচ, লেবু কাটছেন আব্দুর রউফ। আবার অনুমানের উপর ভিত্তি করে পাঁচ থেকে ছয়টি উপাদান একত্রিত করে তা খদ্দেরদের পরিবেশন করছেন।

রউফের হাত থেকে ছোলা খাওয়ার পাশাপাশি তার দক্ষতা দেখে চমৎকৃতও হয় মানুষ। সেখানকার মানুষ বলছে, দিনে দিনে মানুষটি আরো দক্ষ হয়েছেন, বেড়েছে ক্রেতাও।

যারা রউফের ছোলা তৈরি এবং কাটাকাটির বিষয়টি নিজ চোখে দেখছেন, তারা বিষয়টিকে ‘অসাধারণ’ আখ্যা দিয়েছেন।

ভিডিও চিত্র ধারণকারী  মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা সাধারণত অন্ধ মানুষদের ভিক্ষা করতে দেখি। অনেকে দৃষ্টিহীন সেজে ভিক্ষা করে। কিন্তু সেদিক থেকে তিনি সম্পূর্ণ আলাদা। তার পেঁয়াজ কাটা, শশা, লেবু কাটা সত্যি অবাক করার মতো। চোখে দেখতে না পেলেও এত নিখুঁতভাবে কাজ করা যায় তার একটি অসাধারণ উদাহরণ তিনি।’

মনির হোসেন জানান, আব্দুর রউক সরকার গাজীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তার নিজ বাড়ি জামালপুরে। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি বিলিন হয়ে গেলে জীবিকার তাগিদে স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরে পাড়ি জমান তিনি।

ভিডিও চিত্রে আব্দুর রউফ জানান, নদী ভাঙনে ভাটেমাটি হারিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গাজীপুরে আসেন। এখানে এসে তার স্ত্রী পোশাক কারখানায় চাকরি নেন।

কিন্তু তিনি কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে আধা কেজি করে ছোলা নিয়ে বিক্রির জন্য রাস্তায় আসেন। প্রায় তিন মাস আধা কেজি করে ছোলা বিক্রি করেন তিনি। অনেক সময় তার ছোলা বিক্রি হত না। কিন্তু তিনি হতাশ হয়নি।

বর্তমানে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় কেজি ছোলা বিক্রি করেন রউফ। আর স্ত্রী চাকরি করেন সামনের পোশাক কারখানায়। সব মিলিয়ে ভালোই চলছে তার সংসার।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031