চট্টগ্রাম ২৫ মে : পরীক্ষার জন্য ভিসেরা নমুনা পাঠায়নি হত্যাকাণ্ডের আগে নগরীর পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মুন্নিকে ধর্ষণ করা হয়েছেলো কী না বিষটি নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ১৫দিন পরেও তদন্তকারী কর্মকর্তা পরীক্ষার জন্য ভিসেরা নমুনা পাঠায়নি সিআইডি’র কাছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতির কারেণ ভিসেরা নমুনা পাঠাতে দেরী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহে বদি আলম নামে ইকোপার্কের এক দারোয়ানকে গ্রেফতার করেছে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। গত ২৩ মে সোমবার ইকোপার্ক থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মুন্নির স্বজনদের দাবী ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
হত্যার ৩৬ঘন্টা পরে লাশ মর্গে আনা হয়েছিলো জানিয়ে মুন্নির পোষ্টমোর্টেম সম্পন্নকারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ দেবব্রত জানান, গলার দুই পাশে দা জাতীয় (ছুরি নয়) কিছু দিয়ে মুন্নিকে কোপানো হয়েছিলো।
তিনি বলেন, ঘাড়ের উপর গলার দুই পাশে দুটি কোপ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হত্যার আগে মুন্নিকে ধর্ষণ করা হয়েছিলো কী না সে বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া জরুরী। তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য আমরা ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে রেখেছি কিন্তু পুলিশ সে নমুনা এখনো সিআইডির কাছে পাঠায়নি।
এ বিষয়টি জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ কামাল জানান, ভিসেরা নমুনা সিআইডির কাছে পাঠানোর জন্য আমরা মর্গে চিঠি পাঠিয়েছি।
তবে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ডাঃ দেবব্রত বলেন, আমরা এখনো কোনো (২৪.০৫.১৬ পর্যন্ত) চিঠি পাইনি। তিনি বলেন, সিলগালা করে পুলিশ নিজ হেফাজতে সিআইডির ল্যাবে নমুনা নিয়ে যাওয়ার নিয়ম।
মামলার গুরুত্ব বুঝে পুলিশ ভিসেরা নমুনা নিয়ে যায় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি প্রয়োজন মনে করতেন তা হলে পোস্টমর্টেমের পরের দিনই নমুনা নিয়ে যেতে পারতেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, হত্যার আগে মুন্নিকে ধর্ষণ করা হতে পারে।
ইকোপার্কের দারোয়ান বদি আলমকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মোঃ কামাল বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় বদি আলম ঐ জায়গায় কর্মরত ছিলো।
তিনি বলেন, বদি আলম একেক সময় একেক রকম কথা বলছে সে কারণে সন্দেহবশতঃ তাকে গ্রেফতরা করা হয়েছে।
তবে নিহত মুন্নির মা ও ভাই আবুল হাসেম জানান, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
আবুল হাসেম বলেন, আপা (মুন্নি) নিখোঁজ হওয়ার দিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা ৪০ পর্যন্ত (১ ঘন্টা ১০ মিনিট) আপার বান্ধবী (পোর্টসিটি’র ছাত্রী) জ্যোতির সাথে মোবাইলে ৫ বার কথা বলে। জ্যোতি ক্লাসে থাকালীন সময়ে আপা কেনো জ্যোতিকে ৫ বার ফোন করেছিলো সে বিষয়টা পরিস্কার নয়। হাসেম আরও জানান, আপার সাবেক প্রেমিক রাহাত ও জ্যোতি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে।
মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকরা হয়েছে জানিয়ে মুন্নির মা হোসনে আরা বলেন, ভার্সিটির বন্ধুরা তাকে হত্যা করেছে।
কারা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাহাত, জ্যোতি ও মাহবুব মাওলাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যার রহস্য বেড়িয়ে আসবে।
বাদি পক্ষের অভিযোগ থাকা সত্তেও অভিযুক্ত রাহাত, জ্যোতি ও মাওলাকে কেনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর থেকে রাহাত পলাতক রয়েছে।
জ্যোতিকে গ্রেফতার করা হচ্ছেনা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো প্রমাণ ছাড়া একটা মেয়েকে গ্রেফতার করার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, জ্যোতি ইউনিভার্সিটিতে পড়ে- তাকে গ্রেফতার করলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যেতে পারে সে কারণে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
তবে তদন্তকারী কর্মকর্তার এ মন্তব্য গুরুত্বহীন দাবি করে পুলিশের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, বাদী পক্ষের অভিযোগ থাকলে মামলার প্রয়োজনে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে শুক্রবার নগরীর পোর্ট সিটি ইন্টারনাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করতে এসে নিখোঁজ পটিয়ার আবুল কালাম আজাদের মেয়ে মুন্নি আক্তার (২৪)। পরদিন শনিবার দুপুরে নগরীর খুলশী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন মুন্নির মা হোসনে আরা। এসময় তার সাথে ছিলেন মুন্নির বন্ধূ টিটুল, মারুফ, জ্যোতি ও প্রেমিক মাহবুব মাওলা।
ঐ দিন বিকেলে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের খাদ থেকে অজ্ঞাত নামা এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। এলোপাতাড়ি ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয় তরুনীকে।