পুলিশ জানিয়েছে ইয়াবা ও হুন্ডি চক্রের ৩৩ সদস্যের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ‘১ নম্বর মাদক চোরাকারবারি’ সাইফুল করিম । এদের মধ্যে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির দুই ভাই ও এক ফুফাতো ভাইসহ প্রভাবশালী অনেকে রয়েছেন।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, দেশের ১নং মাদক কারবারি সাইফুল করিম মৃত্যুর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াবা ও হুন্ডি চক্রের ৩৩ জনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাদের সবাইকে আসামি করে এসআই রাসেল আহমদ সাইফুল হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ৩৩ আসামির মধ্যে ১৮ জনের নামোল্লেখ ও ১৫ জনকে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে ইয়াবার প্রথম চালান দেশে এনেছিলেন সাইফুল করিম। এরপর রাতারাতি ধনী হয়ে ওঠা সাইফুল কঙবাজার জেলা থেকে সর্বোচ্চ কর দিয়ে সিআইপি মর্যাদা পান। তবে তার বিরুদ্ধে টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় পলাতক আসামি হিসাবে তাকে গত ৩০ মে গ্রেফতার করে টেকনাফ থানা পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর ও ওরুত্বপূর্ণ তথ্য।
পুলিশের একটি সূত্র দাবি করছে, সাইফুলের সাথে সাবেক এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালী বহু জনপ্রতিনিধির সখ্য ছিল। এর সুবাদে প্রথম দিকের তালিকায় তার নাম বাদ পড়ে।
২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ ‘ইয়াবা গডফাদারের’ শীর্ষে ছিলেন আব্দুর রহমান বদি। পরবর্তীতে তাকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আর মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের দেড়মাস পর টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন বদির চার ভাই ও আট নিকটাত্মীয়সহ ১০২ ইয়াবা কারবারি।
এ বিষয়ে জানতে আবদুর রহমান বদির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোট ৬৭ জনের নাম প্রকাশ করেছেন সাইফুল, যারমধ্যে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিক রয়েছেন। তবে মামলার এজাহারে কোনো পুলিশের কর্মকর্তা বা সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। সেখানে সাইফুলের ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম সহযোগী হিসেবে জাফর আলম ওরফে টিটি জাফরের কথা বলা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, টিটি জাফরের মাধ্যমে হুন্ডির টাকায় বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আনা হতো এবং সিন্ডিকেটের সহযোগীদের মাধ্যমে সেই চালান সারাদেশে পাচার করা হতো।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় টিটি জাফর ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- অলিয়াবাদ গ্রামের ছৈয়দ আলম ওরফে সোনা মিয়া, পুরান পল্লান পাড়ার মো. ফারুক (বদির ভাগনে)), শীলবুনিয়া পাড়ার নুর হাছন, মো. দেলোয়ার, মো. আয়াছ ওরফে বর্মাইয়া আয়াছ, তার ছোট ভাই মো. ইয়াছের ওরফে বার্মাইয়া ইয়াছের, ডেইলপাড়ার মো. আমিন, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার আমির আলী ওরফে বর্মাইয়া আলী, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বড় হাবির পাড়ার মো. আলী আহমদ, কেরুণতলীর মো. মিজান এবং লেঙ্গুরবিলের মো. কাদের। এছাড়া অলিয়াবাদ গ্রামের রবিউল আলম, শীলবুনিয়া পাড়ার মো. শফিক, মো. শামসু, উত্তর লম্বরীর মো. শামসু, মধ্য জালিয়াপাড়ার মো. মনিরুজ্জামান এবং নিহত সাইফুল করিমের ভাগ্নে মো. মিজানের নাম রয়েছে ১৮ জনের মধ্যে।
এ বিষয়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031