অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ জলজটের সৃষ্টি হয় প্রতি বছর বর্ষায় চট্টগ্রাম মহানগরের । এতে চরম সংকটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। দীর্ঘদিন পর এ সংকট থেকে মুক্তি দিতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটিরও বেশি টাকা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খাল ও নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা উত্তোলন করেছে সেনাবাহিনী। তবে এক্ষেত্রে জমে থাকা পলিথিনের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলীর।
সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, পলিথিনের জন্য কাজ করতে পারছি না। আমরা ১৩টি খালে কাজ করছি। প্রতিটি খাল থেকেই বিপুল পরিমাণ ময়লা তোলা হচ্ছে, যার সিংহভাগই পলিথিন। এছাড়া পরিষ্কারের কয়েকদিনের মধ্যেই খালগুলো পুনরায় পলিথিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে পানির প্রবাহ কমে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে কর্ণফুলীতে নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য চলছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং। এই প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে গড়ে পাঁচ ফুটের একটি পলিথিনের আস্তরণ তৈরি হয়েছে। যেখানে কোনো মাটি নেই; সবই পলিথিন। ড্রেজারের কাটার দিয়ে পলিথিন তোলা সম্ভব হয় না; উল্টো ড্রেজার মেশিনই বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, কর্ণফুলীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু হয়েছে প্রায় ৯ মাস আগে। এতদিনে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। কাজের এই ধীরগতির জন্য তিনি পলিথিনকেই দায়ী করেন। শুধু কর্ণফুলী নয়; নগরের প্রতিটি নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাচ্ছে পলিথিনে। কিন্তু এসব উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কার্যকর কোনো ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাচ্ছে না প্রশাসন। তবে মাঝে মধ্যে হাট-বাজারে অভিযান চালিয়ে কিছু পলিথিন জব্দ করা হলেও কারখানা বন্ধের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ঢাকার বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত কোটি কোটি পলিথিন প্রতিদিন আসছে নগরে। আর চাক্তাই খাতুনগঞ্জ রেয়াজউদ্দীন বাজার হয়ে এসব পলিথিন ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম গঞ্জে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, পরিবেশবাদীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ২০০১ সালে ২০ মাইক্রনের (পুরুত্বের একক) নিচে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং বাজারজাত নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহারের কথা বলে ২০০৮ সালে নতুন আদেশ জারি করা হয়। যাতে ৫৫ মাইক্রনের নিচে পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ব্যাগ আকৃতির যেকোনো পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ রাখা হয়। কিন্তু দেশে গার্মেন্টস, লবণ ও চিনিসহ ২৩ ধরনের পণ্য প্যাকেজিং-এ মোটা পলিথিন ব্যবহারের অনুমোদনকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পাতলা নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন করছে।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় পাঁচ শতাধিক পলিথিন কারখানা রয়েছে। ছোট্ট একটি ঘরে মাত্র ৫-৭ লাখ টাকা দামের মেশিন স্থাপন করে চলছে পলিথিন উৎপাদন। লোকবলও তেমন বেশি লাগে না। চার পাঁচজন লোক দিয়ে একটি পলিথিন কারখানা চালানো সম্ভব। একজন ব্যক্তি অটোমেটিক মেশিনটি চালাতে পারেন। অপরদিকে একই কারখানায় একই মেশিনে মোটা বা সরু পলিথিন উৎপাদন হয়। কাঁচামালও একই। এতে কারখানাগুলো নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠিন বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যান বোঝাই করে পলিথিনগুলো পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। রাস্তাঘাটে প্রতিটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে সরু পলিথিন ধরা খুব কঠিন। মোটা পলিথিন বোঝাই কাভার্ডভ্যানেই সরু পলিথিন বোঝাই করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পলিথিন কারখানার মালিকদের শক্ত একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্কই দেশব্যাপী পলিথিন সরবরাহ করে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ও রেয়াজউদ্দীন বাজারে গড়ে উঠা সংঘবদ্ধ একটি চক্র পলিথিন সংরক্ষণ এবং বাজারজাত করে। চক্রটি নমুনা হিসেবে একটি বা দুইটি পলিথিন গোপনে দোকানে রাখে। ক্রেতাদের নমুনা দেখিয়ে গোডাউন থেকে পলিথিন বিক্রি করে। পরে রাতের আঁধারে ট্রাকযোগে এসব পলিথিন সরবরাহ হয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে। এক্ষেত্রে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজনকে ম্যানেজ করে এসব বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এসব দোকান ও গুদাম থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করা হয়। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি অভিযান চললেও বেশির ভাগ পলিথিনই অধরা রয়ে যায়।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |