মসজিদের ভেতরে দুই নারীর সঙ্গে ইমামের মারামারির ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জে । এতে রিভা সুলতানা নামের এক নারী গুরুতর আহত অবস্থায় চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কলেজ ছাত্রীকে উত্যাক্ত করার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় পক্ষে বিপক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাজারের জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে। কিন্তু কোনো পক্ষই মুখ খুলতে চায়নি। এ ব্যাপারে  কেউ থানায় অভিযোগও করেননি। তবে, আহত রিভার শ্বাশুড়ি রেনুয়ারা বেগম বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ার‌্যমানের কাছে লিখিত আবেদন পূর্বক বিচার দাবী করেছেন।

জানা যায়, সকাল আনুমানিক ছয়টায় দুইজন নারী মসজিদের সামনে যান। ফজরের নামাজ শেষ হবার পর তারা মসজিদের ভেতর ঢুকে ইমামকে ডাকেন। এ সময় ইমাম ছৈয়দ আহম্মদ (২৬) এর সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি, ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে নারীদের একজন ইমামের দিকে মরিচের গুঁড়ো ছুঁড়ে মারলে ইমাম ও তার সহযোগী রিপন বেপারী দুই নারীকে এলাপাথাড়ি মারধর করেন। এতে রিভা সুলতানা (২২) নামে একজনের মাথা কেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তখন মসজিদে থাকা প্রায় ৮-১০জন মুসল্লি দুই নারীকে আটকে মসজিদের ভেতর তালা মেরে দেন। কিছুক্ষণ পর এলাকার কয়েকজন লোক উপস্থিত হয়ে দুই নারীকে মসজিদ থেকে বের করে পাশ্ববর্তী তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেন।

এদিকে, খবর শুনে আশেপাশের কিছু সংখ্যক লোক নারীদের বাড়ির সামনে ভিড় জমান। তারা বাড়িটি ঘিরে ফেলেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ইস্কান্দার আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত রিভা সুলতানাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান। তিনি বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

আহত রিভা সুলতানা বর্তমানে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অন্যদিকে, এলাকায় বহু খোঁজাখুঁজির পরও ইমামকে পাওয়া যায়নি। আজ শুক্রবার তিনি মসজিদে আসেননি। মসজিদ কমিটির সভাপতি তার মুঠোফোন নম্বর দিতে পারেননি।
খবর পেয়ে এসআই গোপিনাথের নেতৃতে দুপুরে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও প্রাথমিক খোঁজখবর নেন।
এদিকে কলেজে এইচএসসি’র ১ম বর্ষের ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার বাড়িতে গতকাল শুক্রবার দেখা করতে গেলে দেখা যায় তিনি অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শয্যাশায়ী। তিনি প্রচন্ড জরে আক্রান্ত ও মানসিকভাবে দুর্বল। ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি দাবী করেন, কলেজে যাওয়া আসার পথে ইমাম ছৈয়দ আহম্মদ তাকে উত্যাক্ত করেন। তার পিছু পিছু হাঁটেন। তাকে অশালীন আকার ইঙ্গিত করেন। পথে নির্জন জায়গায় তার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করেন ও তার গায়ের ওড়না ধরে টানাটানি করেন। তিনি কয়েক মাস আগে এ কথা তার কলেজের একজন শিক্ষক ও মসজিদ কমিটির সভাপতিকে জানিয়েছেন। কিন্তু ইমাম আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। 

ওই ছাত্রী বলেন. মঙ্গলবার সকালে আমার বড় বোন রিভা মসজিদের সামন দিয়ে যাওয়ার সময় ইমাম তার সঙ্গীদের নিয়ে বোনেক মারধর করে ও মসজিদে তালা মেরে আটকে রাখে। তিনি আরও বলেন, শুনেছি আমি কলেজে যাওয়ার পথে আমাকে আক্রমণ করা হবে। এ জন্য গত তিনদিন আমি কলেজে যাইনি। আমাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার বোন মসজিদে ঢুকেনি।
এ ব্যপারে অভিযোগকারী রেনুয়ারা বেগম বলেন, আমার পুত্রবধু রিভাকে কেনো মারধর করা হলো এ জন্য আমি ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে বিচার দাবী করেছি। তিনি বলেন, ঘটনা শুনে আমার বেয়াই নুরুল আমিন বাজারে গেলে ইমামের লোকজন তাকে লাঞ্ছিত করে। মনের দুঃখে তিনি কোথায় চলে গেছেন আমরা জানি না।

আজ শুক্রবার জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক ব্যক্তি দাবী করেন ওরা দুইজন মসজিদে ঢুকে ইমামের ওপর চড়াও হয়েছে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ঘটে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইমাম কোথায় আছে জানি না। শুনেছি কলেজ ছাত্রী ইমামের বিরুদ্ধে সভাপতির কাছে অভিযোগ দিয়েছিলো।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রায় তিন মাস পূর্বে আমি ঘটনা শুনে ইমামকে সাবধান করি। কমিটির ৫-৬ জনকেও আমি ঘটনাটি জানিয়েছি এবং তাকে মসজিদ থেকে চলে যেতে বলেছি। এরপর ইমাম কয়েকদিন মসজিদে ছিলো না। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ইমাম পুনরায় মসজিদে আসেন। এ কারণে গত দুই মাস আমি ইমামের পেছনে মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছি।

এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ আব্দুর রকিব জানান, ইমামের সঙ্গে দুই নারীর মারামারির কথা ফেসবুকে দেখে আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। দুই পক্ষেরই দুইজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে শুনেছি। কোনো পক্ষই থানায় আসেনি। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শান্ত রয়েছে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031