ঢাকা : মারুফ হোসেন সর্দার ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই পুরস্কার ঘোষণার কথা জানিয়ে বলেন, “এরা প্রত্যেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
এই ছয়জনের মধ্যে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ এবং সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ এর জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
বাকি চারজনের প্রত্যেকের জন্য দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
এই চারজন হলেন- সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আব্দুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ, শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল এবং সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস।
সন্ধান দাতাকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে জানিয়ে পুলিশের ঘোষণায় বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে সংগঠিত ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে’ তদন্ত করে আসছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি বাড্ডার সাতারকুল ও মোহাম্মদপুরে দুটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে- আস্তানা দুটি আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ‘সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ ও ‘বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
“ওই অভিযানে গ্রেপ্তার আনসারউল্লাহর দুই সদস্যের দেওয়া তথ্য ও সেখান থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথির ভিত্তিতে ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখানে তাদের আরও দুটি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে এবিটির ছয়জনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলে।”
পুলিশ বলছে, ওই ছয়জন গতবছর ঢাকায় লেখক অভিজি রায় থেকে শুরু করে সর্বশেষ কলাবাগানে অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়ের মতো বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে অভিজিত খুন হওয়ার পর একে একে খুন হয়েছেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীলয়, অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ।
এর আগে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর কয়েক দিনের মাথায় খুন হয়েছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সম্প্রতি জানান, ব্লগার, প্রকাশক হত্যায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে, যার ১৬টিতে দোষীদের শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।
অভিজিৎ রায় ও ফয়সল আরেফিন দীপনের হত্যাকারীদের ‘কেউ কেউ’ দেশ ছেড়ে গেছে বলেও সে সময় জানিয়েছিলেন তিনি।
ছয় জন সম্পর্কে
ছয় জঙ্গির ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্যসহ তাদের অপরাধের বিষয়ে জানানো হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউজে (ডিএমপি নিউজ)।
শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ সম্পর্কে বলা হয়, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে উপস্থিতি ধরা পড়া এবিটির এই সদস্যর বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। সংগঠনের সদস্যদের সামরিক এবং আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি।
টিএসসিতে অভিজিৎ রায় হত্যা ছাড়াও নীলাদ্রী নীলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা এবং সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যার ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতি ও সার্বিক নেতৃত্ব ছিল বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে ডিএমপি।
এছাড়া জাগৃতি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা, পুরান ঢাকায় নাজিমুউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে শরিফুলকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দারা।
সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) শীর্ষ সংগঠক, কথা বলেন শুদ্ধ বাংলায়।
পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা সেলিম চশমা পড়েন। সামরিক ও আইটি প্রশিক্ষক সেলিমের বাড়ি উত্তরবঙ্গে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে।
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, ওয়াশিকুর বাবু হত্যা, নিলাদ্রী নীলয় হত্যা, মিরপুরের স্কুল শিক্ষক হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতির তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
শরিফুল ও সেলিম- এই দুজনকেই ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সামরিক শাখার সদস্য বাকি চারজনকে ধরিয়ে দেওয়ায় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে দুই লাখ টাকা করে।
এর মধ্যে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরানের বাড়ি সিলেট অঞ্চলে।আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
আ. সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদের বাড়ি কুমিল্লা অঞ্চলে। প্রকাশক আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা ঘটনার মামলার তদন্তে তার জড়িত থাকার সুনিদিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাছাড়া সাদ ধর্মীয় জিহাদের বয়ান দিয়ে থাকে- এমন প্রমাণও রয়েছে পুলিশের হাতে।
শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রমাণ থাকার কথা জানিয়েছে ডিএমপি নিউজ। তার বাড়ি চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস এর বাড়ি কোথায় তা জানতে না পারলেও ঢাকা জেলার আশেপাশে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
অভিজিৎ রায়, নিলাদ্রী নীল এবং সাভারে শান্তা মারিয়ামের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যার ঘটনায় সাজ্জাদ সরাসরি অংশ নেয়- এমন তথ্য উপাত্ত গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এই ছয় জঙ্গির ব্যাপারে যে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে ০১৭১৩৩৭৩১৯৪, ০১৭১৩৩৭৩১৯৮, ০১৭১৩৩৭৩২০৬. ০২-৯৩৬২৬৪০ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।