৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা বিদ্যালয়ের । মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে কিনা, করলে তার হার কত তা জানতে গত বছর জরিপ চালায় জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)। ঢাকার ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪০০ শিক্ষার্থীর ওপর জরিপটি চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার শিক্ষার্থীদের ফলাফলে কী প্রভাব ফেলছে তাও জানার চেষ্টা করা হয় জরিপে। ‘সোস্যাল মিডিয়া পার্টিসিপেশন অব দ্য সেকেন্ডারি স্কুলস ইন ঢাকা সিটি’ শীর্ষক নায়েমের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, স্কুল চলাকালেই সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী আবার এটি ব্যবহার করছে পাঠদান চলাকালেই। যদিও শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ে ফোন নিষিদ্ধ করা হলেও শিক্ষার্থীরা লুকিয়ে ব্যবহার করছে বলে জানান শিক্ষকরা। সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ক্ষতির বিষয়টিও উঠে এসেছে নায়েমের প্রতিবেদনে। জরিপে অংশ নেওয়া ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীই বলেছে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার তাদের পড়ালেখার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের ভাষ্য, যে সময়টুকু এখন তারা ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সাইটে ব্যয় করছে আগে এ সময় তারা পড়ালেখা করতো। এমন কি সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার তাদের বাড়ির কাজেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ কারণে তারা সময় মতো অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারছে না। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে এই খবর প্রকাশিত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিক জীবনের নতুন এক বাস্তবতা। কিন্তু এই যোগাযোগ ব্যবস্থাটি নিয়ে সারা বিশ্ব উদ্বেগে রয়েছে এবং ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। কারণ শিশু-কিশোরদের ওপর এত প্রভাব মোটেই সুখকর নয়। বাংলাদেশেও এ নিয়ে উদ্বেগ মোটেই কম নেই। শিখন-শেখানো কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াই ২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে শ্রেণিকক্ষে সেলফোন নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেই চলে। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আসক্তি রোধ করা যাচ্ছে না। আর, তার প্রমাণ, নায়েমের জরিপেই উঠে এসেছে, মাধ্যমিকে স্কুল চলাকালেই সামাজিক যোগাযোগ ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আসক্তির বিষয়টিই। দেখা যাচ্ছে, যে সময়টুকু এখন তারা ব্যয় করছে ফেসবুক বা অন্যান্য সাইটে, আগে, সেই সময়টাতে তারা লেখাপড়া করতো। স্কুল থেকে দেওয়া হোমটাস্ক বা বাড়ির কাজ সম্পন্ন করতো। যথাসময়ে জমা দিতে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সক্রিয় থাকতো। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পৃক্ততা তাদের সময়ানুবর্তিতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় খুবই খারাপ করছে। সার্বিকভাবে লেখাপড়ায় পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এ অবস্থা দীর্ঘতর হলে তা শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনের ক্ষেত্রে অপূরণীয় ও ভয়ংকর ক্ষতি সাধন করবে এবং পরবর্তী জীবনে গিয়ে শোধরানোর কোন অবকাশই থাকবে না এবং হা হুতাশ করতে হবে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। কাজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আসক্তি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। শিক্ষককে পাঠদানের ফাঁকে ফাঁকে নজর রাখতে হবে কোন ছাত্র ক্লাসে সেলফোন ব্যবহার করছে কিনা। আর কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে তদারকি বাড়াতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির ক্ষতি একমুখী নয়, বহুমাত্রিক। শুধু লেখাপড়া নয়, অধিক সময় ধরে মোবাইল ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীদের মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষণ ধরে স্থির বসে বা শুয়ে থাকার কারণে তাদের শারীরিক সচলতা হ্রাস পায়। ফলে ঘাড় ব্যথা হয় ও স্থ্থূলতা বাড়ে। এতে তারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার মানসিকভাবেও তৈরি হয় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতা, একাকিত্ব, অপরাধপ্রবণতা।
আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা কীভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয় সেটা শেখে পরিবার ও স্কুল থেকে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকটা সময় ব্যয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা সেটা শিখতে পারছে না। এতে তাদের সামাজিকীকরণও ব্যাহত হচ্ছে। বাস্তব জগৎ থেকে একটি ভার্চুয়াল জগতে পড়ছে; আর তাতে অনেক ক্ষেত্রে তারা সম্পৃক্ত হচ্ছে ভূয়া সম্পর্কে। এর ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে ভালোভাবে দায়িত্ববোধের বিকাশ ঘটছে না। তাদের মনের ভিতরে সৃষ্টি হচ্ছে মূল্যবোধ হতে নানা বিচ্যুতি ও অনৈতিকতা। এটা দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জাতিগঠনের অন্তরায়। কাজেই সর্বতোভাবে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি কমাতে অভিভাবকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা সন্তানকে অবশ্যই গুণগত সময় দিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস কিনতে নিরুৎসাহিত করতে হবে পরিবার থেকেই। শিক্ষকদেরও এক্ষেত্রে ইতিবাচক সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের এই আসক্তি জোরজবরদস্তি করে সম্পূর্ণ বন্ধ করা যাবে না। এটি বন্ধ করতে হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বোধ জাগাতে হলে তাদের ভালো করে বোঝাতে হবে যে এটি ব্যবহারের ফলে তাদের সময়ের অপচয় হচ্ছে এবং মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাছাড়া শিক্ষকদের উচিত অংশগ্রহণমূলক পাঠদানের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষকে আনন্দদায়ক করে গড়ে তোলা, যাতে শিক্ষার্থীরা অন্যদিকে মনোযোগের সুযোগ না পায়। দরকার হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কুফল নিয়ে আলোচনা, পাঠচক্র অথবা কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। প্রতিটি স্কুলে একটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করে নজরদারি বাড়ানোও দরকার। নায়েমের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারমুখী করা, সরকারকে সোস্যাল মিডিয়ার অংশগ্রহণের বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া এবং অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। আশা করি, বিষয়গুলো আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |