সারা বিশ্বের নারীরা ন্যায্য অধিকারের দাবিতে নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। দেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। শুরুর দিকে নারী দিবস স্বল্প পরিসরে পালিত হতো। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৯ সালে বিশ্বের ২৯টি দেশে সরকারি ছুটিসহ ৬০টি দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়েছে।
১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের সুঁই কারখানার নারী শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের সমতা, ভাগ্য উন্নয়নের এ প্রয়াস। ১৯১০ সালে জার্মান নেত্রী ক্লারা জেটিকনের ঘোষণায় পর থেকে বিশ্ব গণতান্ত্রিক মহিলা ফেডারেশনের উদ্যোগে সর্বপ্রথম এ দিবসটি পালিত হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে জাতিসংঘে একটি সনদ ঘোষিত হয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি নারী সম্মেলনে নারীর অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছে। তারপরও দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। অধিকাংশ দেশে নারীর প্রতি মানবাধিকার চরমভাবে লংঘিত হয়েছে। ১৯৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা উপযুক্ত বেতন ও দশ ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামে। আন্দোলন দমনে পুলিশ নারী শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ফলে নারী শ্রমিকদের আন্দোলন আরো জোরদার হয়। পরবর্তীতে নারীর ভোটাধিকারের ইস্যু আন্দোলনের অন্যতম কারণ হিসেবে গৃহীত হয়। আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৮৬০ সালে নিউইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়। এ সংগ্রামকে স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন ক্লারা জেটকিন।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও নারী শিক্ষার সংকট তীব্র। বাংলাদেশের নারীর শিক্ষা ও নারীর উন্নয়ন দারিদ্র্যের বেড়াজালে আবদ্ধ। নারীর জন্য শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যের সুযোগ ও আইনগত সহায়তার সুযোগ খুবই অপ্রতুল। নারীর কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আশা করা যায় শুধুমাত্র শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে। এদেশের বিশাল নারী সমাজ বঞ্চিত শিক্ষার আলো থেকে। তবুও দেরীতে হলেও নারী সমাজ বেরিয়ে এসেছে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে। আইনী ও নীতিগত ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও এখনো নারীরা সমাজ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একাংশ নারী এখন গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানায় স্বল্প বেতনের শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছেন। নিরক্ষর এবং স্বল্প শিক্ষিত নারীদের এ অংশটিই বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী গার্মেন্টস খাতের প্রধান চালিকাশক্তি। এরা স্বাধীন জীবনের কিছুটা স্বাদ পেলেও নানা অব্যবস্থাপনা মোকাবেলা করেই তাদের টিকে থাকতে হয়। চাকুরির অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার অভাব তো রয়েছেই। পাশাপাশি দীর্ঘসময় শ্রমদান, যৌন হেনস্তার শিকার হওয়া, অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, রয়েছে চাকুরি হারানোর ভয়।
বর্তমানে সুশিক্ষার মাধ্যমে নারীরা সৃজনশীল ও আধুনিক হয়ে নিজের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে। নারীকে পুরুষের মতো সম-সুযোগ ও নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে পারলেই অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন একটি প্রধান শর্ত। নারীকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মানসিকতার ইতিবাচক পবিরর্তনের মাধ্যমেই তা অর্জন করা সম্ভব। আজকের বৈশ্বিক সমাজে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান দৃশ্যমান। নারীরা যে সব শ্রম দিচ্ছেন তাদের সব ধরনের শ্রমের স্বীকৃতি দিয়ে দেশের উন্নয়নকে ভিন্ন মাত্রায় তরান্বিত করা সম্ভব।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন : আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আজ সকাল সাড়ে ৯টায় নগর ভবনস্থ বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
বিলস : আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিলস আজ বেলা ৩টায় ডিসি হিল চত্বরে জমায়েত এবং বিকেল ৪টায় চেরাগী পাহাড়স্থ সুপ্রভাত থিয়েটার হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র : আলোচনা সভা ও র্যালি বেলা ২টায় দারুল ফজল মার্কেটস্থ টিইউসি কার্যালয়ে।
মাসিক চাটগাঁ ডাইজেস্ট : শীর্ষ দশ পেশাজীবী নারীকে সম্মাননা, বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |