চট্টগ্রাম, ১৭ মে : অনাবৃষ্টি আর খরায় কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া দেশের একমাত্র কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। লেকে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৈনিক উৎপাদন অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে বলে জানা গেছে।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান জানান, অনাবৃষ্টির কারণে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন অনেক হ্রাস পেয়েছে।
ব্যবস্থাপক বলেন, বর্তমানে কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ফুট উচ্চতার পানি কম রয়েছে। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সোমবার সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১০৯ এমএসএল (মীনস সী লেবেল) পানির ধারণ ক্ষমতার এই লেকে বর্তমান সময়ে ৮২ এমএসএল পানি থাকার কথা। কিন্তু অনাবৃষ্টি আর খরা পরিস্থিতির কারণে লেকের পানির স্তর অব্যাহতভাবে নিচে নামতে থাকায় লেকে বর্তমানে পানির স্তর রয়েছে ৭৬ এমএসএল। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ এমএসএল কম। পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়ায় লেকের পানির ওপর উৎপাদন নির্ভরশীল এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন এখন অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কাপ্তাই লেকে পর্যাপ্ত পানি থাকলে এই কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ২৪২ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। কিন্তু এখন এই কেন্দ্রের উৎপাদন দৈনিক ১০০ থেকে ১২০ মেগাওয়াট। প্রচ- গরমের কারণে দেশে বর্তমানে প্রতি মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পরিস্থিতি কবে নাগাদ উন্নতি হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা জানান, কবে বৃষ্টি হবে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। বৃষ্টি আসতে আরো দুই সপ্তাহ দেরি হলেও যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে না যায় সে জন্য সীমিতহারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে এমনিতেই লেকের পানি কমছে। তার ওপর টানা খরা সেই লাখ লাখ লোক লেকের পানি ব্যবহার করার ফলে প্রতিদিন প্রায় এক ফুটের কাছাকাছি পানি কমে যাচ্ছে।
এই অবস্থা চলতে থাকলে লেকে পানির স্তর অচিরেই ৬৬ ফুট এমএসএলে নেমে যাবে। আর ৬৬ ফুট এম এস এলে পানির স্তর নামলেই কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সেই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে বর্তমানে কিছুটা রেশনিং করে কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।