৭ জন চেয়ারম্যান বৃহত্তর চট্টগ্রামে সাত উপজেলায়, ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। গতকাল ২০ ফেব্রুয়ারি চার উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান ও তিন উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেনের কার্যালয়ে যাচাই-বাছাইয়ে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। এদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তারা নির্বাচিত হতে চলেছেন।
এর মধ্যে রাউজানে একেএম এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, সীতাকুণ্ডে এসএম আল মামুন, রাঙ্গুনিয়ায় খলিলুর রহমান চৌধুরী, মীরসরাইয়ে মো. জসিম উদ্দিন, সন্দ্বীপে মো. শাহাজাহান একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে জয়নাল আবেদীন ও কাপ্তাইয়ে মফিজুল হকেরও কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাউজানে ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা মীরসরাই ও রাউজানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।
এতে মীরসরাইয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবুল হোসেন ও ফটিকছড়িতে একই পদে রেজাউল করিম দ্বীনু, হাটহাজারীতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সৈয়দ মোস্তফা আলম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নুসরাত জাহান, রাঙ্গুনিয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. শাহাদাত হোসেন তালুকদার ও ফজলুল ইসলাম এবং সন্দ্বীপে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. মাঈন উদ্দীনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে সাত উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৩টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।
তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাই ২০ ফেব্রুয়ারি। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৮ মার্চ এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আমাদের রাউজান প্রতিনিধি জানান, পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলকারী তিন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নুর মোহাম্মদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফৌজিয়া খানম মিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার অফিসে মনোনয়ন দাখিলকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাছাই বাছাই করে তিনজনকেই বৈধ প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন নির্বাচনী কর্মকর্তা অরুন উদয় ত্রিপুরা। এখানে তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ দিন তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বুধবার যাচাই বাছাইয়ের পর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে জসিম উদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফেরদৌস আরা ফেন্সির মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ের পর ৩ জনের প্রার্থিতা বৈধ ও একজনের প্রার্থিতা স্থগিত ঘোষণা করেছে কমিশন। বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন- সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস হোসেন আরিফ, মো. আলাউদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন আহম্মদ। মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে অপর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম আবুল হোসেনের। মীরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান রেনু জানান, স্থগিত হওয়া প্রার্থী আবুল হোসেনের বিষয়ে ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা রয়েছে। তবে তিনি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা করতে পারেন তাহলে তাও বৈধতা পেতে পারে।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী। মনোনয়ন যাছাই-বাছাই শেষে তাঁর প্রার্থিতা বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পক্ষান্তরে এই পদে অন্য কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বাছাই শেষে তিনি সহ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে এবং বাতিল হয়েছে ২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। মনোনয়ন বৈধ ও বাতিল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলেও ২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে শাহাদাত হোসেন তালুকদারের মনোনয়ন ফরমে আয়কর বিবরণী দাখিল না করায় এবং নতুন ব্যাংক হিসাব না খোলায় অন্যদিকে মো. ফজলুল ইসলাম সেলিমের মনোনয়ন ফরমে হলফনামা প্রদান না করায় তাদের দুইজনের মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়েছে। যাছাই-বাছাই শেষে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী বৈধ প্রার্থীরা হলেন- চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ইসলামী ফ্রন্ট রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোয়ারা বেগম ও দিলু আক্তার।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম আল মামুন একক প্রার্থী হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা মিল্টন রায় জানান, মনোনয়ন পত্র যাছাই বাছাইকালে চেয়ারম্যান পদে এসএম আল মামুন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ ইউনুছ, মনিরুল ইসলাম, কাজী গোলাম মহিউদ্দিন ও আলাউদ্দিন ছাবেরী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিলুফা ইয়াছমিন নিলু, রহিমা আক্তার ও জয়নব বিবি জলী ও মনোনয়পত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটানিং অফিসার মো. আরিফুর ইসলাম জানান, প্রার্থীদের মনোনয়ন বাচাইয়ের পর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী যথাক্রমে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম রাশেদুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল মনসুরের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। তাছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান আট প্রার্থীর মধ্যে সৈয়দ মোস্তাফা আলম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে নুসরাত জাহানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বর্তমানে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাত জন। তারা হলেন, নুরুল আলম, কাজী মো. আলাউদ্দিন আজাদ, উদয় কুমার সেন, এস এম খালেদ চৌধুরী, মো. জামাল উদ্দিন, মো. কলিম, এস এম জহির উদ্দিন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান সাজেদা বেগম, মোছাম্মদ শারমিন আক্তার, মুক্তার বেগম ও মরিয়ম বেগমের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন।
সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানান, সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাস্টার শাহজাহান বিএ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থী না থাকায় তিনি নির্বাচিত হওয়ার পথে কোন বাধা নেই। তিনি ইতোপূর্বে দুই বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দীন মিশন ঋণখেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো. কামাল হোসেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বাকি ৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস পদে ৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধতা পায়।
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রেজাউল করিম দ্বীনুর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনির হোসাইন। গতকাল বুধবার সকালে তিনি এ আদেশ দেন। উল্লেখ্য, এখানে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয় জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কাপ্তাই থেকে আমাদের প্রতিনিধি কাজী মোশাররফ হোসেন জানান, মফিজুল হক ব্যতীত অন্য কোন প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হননি। গতকাল ২০ ফেব্রুয়ারি বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এতে মফিজুল হকের প্রার্থিতা বহাল থাকে। এর ফলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থী হন ৪ জন। গতকাল বাছাইয়ে সবার প্রার্থিতা বহাল থাকে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদীন।