বিএনপির হাইকমান্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট করেই জানিয়েছে । তবে দলের যখন এমন সিদ্ধান্ত তখন প্রথম দফায় ৮৬টির মধ্যে ২০টিরও বেশি উপজেলায় স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দুই পদে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বর্তমানে উপজেলার জনপ্রতিনিধিও। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা যাবে কি না- এই প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে তখন বিএনপি নেতারা বলছেন, দলে থেকে ভোট করা যাবে না।

তারা বলছেন, সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বাচনে গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার চিন্তাভাবনা চলছে। যদিও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয় এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। তবে দল থেকে পদত্যাগ করে কেউ ভোটে লড়লে আপত্তি করবে না বিএনপি। ইতিমধ্যে দলের দায়িত্বশীলদের এমন চিন্তাভাবনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আগামী ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮৬টি উপজেলায় নির্বাচন। এবারই প্রথমবারের মতো উপজেলার তিন পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জোরেশোরে মাঠ কাঁপাচ্ছেন।

তবে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে অভিযোগ করে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা আছে বিএনপির। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তার কাছে তথ্য আছে যে বিএনপির বহু নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে আসছেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই বিএনপির নেতারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাদের পাশেই আছেন। এই অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা যায়নি।

এমন নেতাদের প্রতি বিএনপির মনোভাব কী হবে- এমন প্রশ্নে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘৩০ তারিখ যে নির্বাচন দেখেছে জাতি এরপর আর নির্বাচনে কীভাবে অংশ নেই? নিয়েও বা কী হবে? তাই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্জনের। যদিও তৃণমূলের অনেকে হয়ত নির্বাচনে যাবে স্থানীয় প্রভাব ধরে রাখার জন্য হলেও। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তো অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত হবে।’

আর নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে তারা অংশ নিচ্ছেন কারণ তাদের জনপ্রিয়তা আছে। সেটা ধরে রাখতে তারা নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। এক্ষেত্রে দল কী সিদ্ধান্ত নেবে তা নিয়ে তারা খুব চিন্তিত নন।

নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সদর উপজেলা থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি আগে দুই বারের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার দাবি, তিনি এলাকায় জনপ্রিয়। তাই নির্বাচন করছেন।

ঢাকা টাইমসকে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এটা স্থানীয় নির্বাচন। এখানে দলের সিদ্ধান্তের থেকেও প্রার্থী হিসেবে আমাদের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের ফ্যাক্ট। আমি দুই বারের চেয়ারম্যান। আমার জনপ্রিয়তা একজন সংসদ সদস্যের চেয়ে কোনো অংশে কম না। তাই দল কী সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে অংশ নিলে সেটা নিয়ে ভাবছি না।’

নাটোর সদর ছাড়াও সুনামগঞ্জের চার উপজেলা, সিরাজগঞ্জের একটি, নীলফামারীর একটি, রাজশাহীর পাঁচটি, হবিগঞ্জের চারটি, নেত্রকোনার একটি, পঞ্চগড়ের তিনটিসহ আরও কয়েকটি উপজেলায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা।

বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন,‘দল থেকে পদত্যাগ করে যদি কেউ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাহলে তো দলের কিছু করার থাকবে না। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটে গেলে অবশ্যই দল থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। এমন কি বহিষ্কারের মত সিদ্ধান্তও আসতে পারে। অন্যথায় শৃঙ্খলা ধরে রাখা কঠিন হবে।’

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই মানতে হবে। অন্যথায় দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আশা করি দল সেইরকম সিদ্ধান্তই নেবে। তবে কি সিদ্ধান্ত আসবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031