পরে তনুর অন্তর্বাস, পোশাক ও গোপনাঙ্গ এবং রক্তের ডিএনএ প্রতিবেদনে তিন ব্যক্তির বীর্যের আলামত পাওয়া যায়। সোমবার রাতে কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কুমেকের ফরেনসিক বিভাগের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে ডিএনএ প্রতিবেদন সরবরাহ করতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত হতে আমরা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। ভেজাইনাল সোয়াব (ফ্লুইড) নমুনা হিসেবে আমাদের পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য তাদের কাছে লিখিতভাবে চেয়েছিলাম। তারা আমাদের জানান, পরীক্ষায় তারা আলামত পাননি, তাই নমুনা সংরক্ষণ করা হয়নি। পরে আমরা তনুর মরদেহে থাকা কাপড়-চোপড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠানোর পর প্রাপ্ত রিপোর্টে ধর্ষণ ও তিন ব্যক্তির বীর্যের আলামত পাওয়া যায়।
তবে, ডিএনএ প্রতিবেদনে সন্দেহভাজনদের সঙ্গে ডিএনএ ম্যাচিং করা সম্ভব হয়েছে কি-না এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে সিআইডির পুলিশ সুপার বলেন, ‘বেশ কিছু তথ্য, উপাত্ত, মোবাইল ফোনের এসএমএস ও জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যদিয়ে আমরা ওই কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. কে পি সাহা কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
এর আগে তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তনুর কাপড়, দাঁত, নখের ডিএনএ ও ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রতিবেদন চেয়ে সিআইডির নিকট চিঠি প্রেরণ করে। কিন্তু ওই প্রতিবেদন সরবরাহে সিআইডি অপারগতা প্রকাশ করে আসছিল। সর্বশেষ গত রবিবার ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের নিকট চিঠি প্রেরণ করেন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ও কুমেকের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা ওরফে কেপি সাহা।
ওই চিঠিটি অবগতির জন্য কুমিল্লার ১নং আমলি আদালতের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পাঠানো হয়। চিঠিতে সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য পুনরায় কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের পর তদন্ত সংস্থা সিআইডি কর্তৃক সংগৃহীত নমুনার ৪টি দাঁত, ৪টি ভেজাইন্যাল সোয়াব, ডিএনএ অ্যানালাইসিস ও পরীক্ষার প্রতিবেদন চাওয়া হয়।
এদিকে সিআইডি কর্তৃক সংগৃহীত ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে আদালতে চিঠির অনুলিপি দেয়া হলেও তা আমলে নেয়নি আদালত। দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের ৪৮ দিন পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
সিআইডি-কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের আরও জানান, সোহাগী জাহান তনুর পেন্টি, কাপড়, শরীরের অংশবিশেষ, ভেজাইন্যাল সোয়াব ও রক্তের ডিএনএ প্রতিবেদনে তিন ব্যক্তির বীর্য পাওয়া গেছে। পেন্টিতে থাকা রক্ত তনুর বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের চিঠির প্রেক্ষিতে এবং মামলার তদন্তের স্বার্থে মেডিকেল বোর্ডকে ডিএনএ প্রতিবেদন সরবরাহের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যত দ্রুত দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে ততই এ মামলার অগ্রগতি দেশবাসীকে দেখানো যাবে বলে আশা করছি।
গত ২০ মার্চ সোহাগী জাহান তনুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজ এলাকার পাশের একটি জঙ্গলে মরদেহ ফেলে দেয় ঘাতকরা। পুলিশ, ডিবির পর বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গত ২৮ মার্চ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য তনুর মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এরপর ৩০ মার্চ দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত ৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে দেয়া প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা এবং ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরই চারদিকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
পরে, ডিএনএ প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে আজ সোমবার সিআইডি থেকে তথ্য প্রকাশ করা হলো।