জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও কারো জন্য থেমে থাকবে না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন। এ নির্বাচনও নিয়ম অনুযায়ী যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির যে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে, তাতে তাদের কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচিই পালন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, তারা জাতীয় নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। এখন তারা পথহারা পথিকের মত অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি আসলে নির্বাচন ফোবিয়ায় (ভীতি) ভুগছে। নির্বাচনে হারতে হারতে তারা এখন জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছে।
বয়কট করলে তো অন্তত বলতে পারবে যে, আমরা হারছি না। হেরে যাবে এটা অবধারিত জেনে তারা বয়কট করতে পারে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি না আসায় অংশগ্রহণমূলক হবে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না, কারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আর কারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনের ট্রেন কারও জন্য থেমে থাকবে না। উপজেলা নির্বাচনের ট্রেনও আপন গতিতে চলতে থাকবে। কারও জন্য থেমে থাকার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় নির্বাচনের মতো হবে উপজেলা নির্বাচন সিইসির এমন বক্তব্যকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হয়েছে। তাঁর (সিইসি) সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ কোথায়?
জাতীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনও শিডিউল অনুযায়ী হবে। এখানে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ নেই। বিএনপির সমাবেশ পিছিয়ে দেয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনুমতি না পেয়ে সমাবেশ বন্ধ করেছে, এমন অভিযোগ অন্তত পাচ্ছি না। অনুমতির জন্য কোনো অসুবিধা হবে না। তারা যখনই অনুমতি চাইবে, তখনই তারা সমাবেশের অনুমতি পেয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, তবে রাস্তায় কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারবে না। সেটা শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য। বিএনপি পূর্ব অনুমতি নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করুক।
সভা তারা করছে না, তাদের নিজেদের কারণে। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এমপি বা মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনদের মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে নন তিনি। এমপি-মন্ত্রীরা নিজেরাই তো আছেন, আবার তাদের আত্মীয়স্বজনদের টানবেন কেন? এ সময় সাংবাদিকের অপর একটি প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো অভিযোগ থাকলে মনোনয়ন বোর্ড খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এখানে কার ভাই, কার বোন, কার ছেলে সেটা বিষয় নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কার জনপ্রিয়তা বেশি, কে উইনেবল। তাদের আমরা মনোনয়ন দেব। উপজেলা পর্যায়ে মনোনয়নের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কোনো উপজেলায় নিয়ম অনুযায়ী নাম আসলে, তার জনপ্রিয়তা থাকলে, দলের ভূমিকাটা আত্মীয়তার জন্য ঢাকা পড়বে এটা ঠিক না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিজয়ী হওয়ার মত প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পাঠানো উপজেলা চেয়ারম্যানদের নামের তালিকা থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
তবে দলের করা সার্ভে রিপোর্টকেও গুরুত্ব দেয়া হবে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য মোট ১৫১৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন লাভের জন্য আবেদন করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষরিত তিনজনের তালিকা থেকে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড চুড়ান্ত প্রার্থী মনোননয়ন দেবেন। আগামী শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়ন চুড়ান্ত করার কথা রয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।