সড়কে মৃত্যুর মিছিলকে আমাদের রোধ করতেই হবে।সড়কে থামছে না মৃত্যুর মিছিল। প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের পরও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। তড়িঘড়ি করে নানা উদ্যোগ নিয়ে সড়কে কিছুটা শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করা হলেও তা টেকসই হয়নি। ফলে দুর্ঘটনাও কমেনি, ঝুঁকিও রয়ে গেছে পদে পদে। কোনো মতেই যেন শৃঙ্খলা ফিরছে না সড়ক মহাসড়কে। গত কয়েক মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তদারকিতেও বিশৃঙ্খলা দূর হয়নি। অসংখ্য মামলা ও বিপুল জরিমানার পরও নৈরাজ্য রয়ে গেছে আগের মতোই। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নৈরাজ্য বন্ধে গোড়ায় হাত দেওয়া হয়নি। আগায় পানি ঢালা হয়েছে। এত আন্দোলন, এত মৃত্যুর পরেও পথচারী যেমন সচেতন নয়, তেমনি বেপরোয়া গাড়ির চালকরা। কোনও নিয়মই যেন একরোখা বাঙালির চেতনাকে জাগাতে পারছে না। নিয়ম ভঙ্গই যেন এদেশে ক্ষমতা আর বাহাদুরির বহিঃপ্রকাশ। নগরবাসী ও সংশ্লিষ্ট নগর বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন- নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী ও দেশবাসীর এত বড় আন্দোলনও কি ব্যর্থ হতে বসেছে অবশেষে!
কিছুতেই থামছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দেশব্যাপী নজিরবিহীন আন্দোলনেও গণপরিবহনে ফেরেনি শৃঙ্খলা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সংসদে পাস হয়েছে, তারপরেও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা যেন থামছেই না। সড়ক দুর্ঘটনায় একে একে মৃত্যু হচ্ছে শিক্ষার্থীর। সেই সাথে মৃত্যু হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীকে নিয়ে বোনা তাদের মা-বাবার স্বপ্নেরও। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সোমা বড়ুয়া। কোতোয়ালী মোড় এলাকায় রাস্তা পার হতে গিয়ে কাভার্ড ভ্যান চাপায় মৃত্যু হয় তার। সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অভিযানের পরেও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় তেমন প্রভাব পড়েনি। অভিযানকালে অনেক মালিক ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন সড়কে নামান না। তবে অভিযান শেষে আবারও সড়কে চলে এসব যানবাহন। এছাড়া বরাবরের মতো সড়কে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোর কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
ট্রাফিক কর্মকর্তাদের বক্তব্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। আইন-কানুন মানছে না বলেই সড়ক-মহাসড়কে নানা নৈরাজ্য চলছে। অদক্ষ চালকের অবহেলা, অত্যধিক যাত্রী বহনের মাত্রাতিরিক্ত বাণিজ্যিক প্রবণতা, সর্বোপরি বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের মতে, সড়কের সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত গাড়ি, বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিংয়ের কারণেই সড়কে মৃত্যুর ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞদের প্রস্তবনার মধ্যে রয়েছে, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ সব সময়ের জন্য শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনভঙ্গের দায়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সড়কের উল্টো পথে চলাসহ যাবতীয় রকমের অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। সার্বিক দুঃসহ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হলে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে এবং সেই নীতির শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের মধ্যকার দুর্নীতিবাজ অংশটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষমতাহীন-ক্ষমতাধর নির্বিশেষে ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘যাত্রীদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। কিন্তু সড়কে বাসের চালক-সহকারীরা যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় থাকে যাত্রীদের সচেতনতা কোনো কাজে আসবে না।’ তাঁরা বলেন, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা অন্যায় করে চললেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা চরম উদাসীন। অনেক পরিবহন মালিক কম মজুরিতে অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন বলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন মানুষ মরছে। সড়কে নামলেই যেন মৃত্যু ওঁৎ পেতে থাকে। এসব বন্ধে সকল সংস্থার সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। ঘর থেকে বের হয়ে কোনো মানুষ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে, যেন তাদের যাত্রা নিরাপদ হয়, তার ব্যবস্থার দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন বলেই বাণিজ্যিক প্রবণতা থামছে না দুর্ঘটনা ঘটছে বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের মধ্যকার দুর্নীতিবাজ অংশটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।