rahing

চট্টগ্রাম, ১৩ মে : টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলারআনাচ-কানাচে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দালালদের মাধ্যমে বিজিবির একশ্রেণির সদস্যের সহযোগিতায় প্রতিদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তাদের বড় একটি অংশ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে পাচার হচ্ছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ থাকায় তারা যা ইচ্ছে তা-ই করার সুযোগ পাচ্ছে। আর এতে সমস্যায় পড়ছে স্থানীয় লোকজন। বড় ধরনের সামাজিক অপরাধ ঘটিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

টেকনাফ উপজেলার ২ নম্বর ওয়ার্ড পুরান পল্টন পাড়ার সমাজসেবক ও মায়মুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি মো. আবুল কাশেম (বুলু) বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের গুলিতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজার থেকে মানবপাচারকারীরা গা ঢাকা দিলেও রোহিঙ্গা পাচার থেমে নেই। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অজানা স্থান থেকে রোহিঙ্গা পাচার চলছে এখনো।

প্রতিরাতে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে নতুন নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে জানিয়ে আবুল কাশেম বলেন, কিন্তু কয়েক দিন পর আবার তাদের দেখা যায় না।

রোহিঙ্গা সম্পর্কে জানতে চাইলে টেকনাফের ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবুজার আল জাহিদ বলেন, রোহিঙ্গারা টেকনাফ দিয়ে আসছে এখনো। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের যেখানে পাওয়া যায়, সেখান থেকেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

তবে উদ্বেগ প্রকাশ করে আবুজার আল জাহিদ বলেন, “এত কিছুর পরও টেকনাফে নতুন নতুন রোহিঙ্গা আসার কথা স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছেন। তাদের ধরতে বর্ডার গার্ড পুনরায় অভিযানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যেসব গোপন স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের পাচার করার কথা শোনা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড খোঁজ-খবর নিচ্ছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য বেশ কিছু পয়েন্ট ও দিনের কয়েকটি সময়ের কথা জানা যায়। এর মধ্যে একটি সময় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা। টহলরত বিজিবির সদস্যরা পালাবদলের জন্য এ সময় ফিরে যান ক্যাম্পে। সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা তখন প্রায় ফাঁকা থাকে। একইভাবে বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা। এ সময় বিজিবি টহলদলের রদবদলের কারণে সীমান্ত প্রায় অরক্ষিত থাকে। এ সুযোগে শুরু হয় পুরোদমে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ।

সীমান্তে এসব অনুপ্রবেশের অপরাধ চলছে বিজিবির কথিত সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে, একাধিক দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের উখিয়ার ধামনখালী, রহমতের বিল, ডেইলপাড়া, করইবনিয়া, ঘুমধুমের নয়াপাড়া, জলপাইতলী, তুমব্রু পশ্চিম কূল, বাঁশবাগানসহ মাহমুদুল ড্রাইভারের বাড়ি সংলগ্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে ৬টা, দুপুর ১২টা থেকে ২টা, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাতভর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।

সীমান্তবাসীদের অভিযোগ, তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্প পাড়ার আইয়ুব আলী, পশ্চিম কুলের শাহজাহান ও তার ভাই মোহাম্মদ কবির, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জলপাইতলীর শাহা আলম, হাকিম, তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্প পাড়ার মো. রুবেল ছাড়াও আরো কয়েকজনের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করে আনা হয়।

ঘুমধুম জলপাইতলী এলাকার সিএনজি অটোরিকশাচালক নুর হোছন, নুরুল আমিন, লম্বা নুর হোছন, শাহা আলম, বেতবুনিয়ার নুরুল বশর, বিজিবি ক্যাম্প পাড়ার ইজিবাইক চালক মো. রুবেলরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী শত শত রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির এলাকায় পৌঁছে দেন।

ধামনখালী ও রাহমতের বিল পয়েন্ট দিয়ে জিয়াবুল, মুফিজ, হাশেমসহ ৮-১০ জন একইভাবে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে কুতুপালং শিবির এলাকায় পৌঁছে দিয়ে থাকে।

উখিয়ার করইবনিয়া, ডেইলপাড়া সংলগ্ন রেজু আমতলী, ওয়ালিদং পাহাড়ি সীমান্ত দিয়েও অনুপ্রবেশ করছে অসংখ্য রোহিঙ্গা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথিত কয়েকজন দালাল জানান, সীমান্তের তুমব্রু থেকে উখিয়ার ঘাট কাস্টমস পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের তুমব্রু ও বেতবুনিয়ায় বিজিবির চেকপয়েন্ট রয়েছে ২টি। এ ক্ষেত্রে বিজিবির সোর্সকে টাকা দিয়ে ‘বস্তা’ (রোহিঙ্গা) পাচার করা হয়। কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের গড়ে তোলা রোহিঙ্গা বস্তিটি নতুন অনুপ্রবেশকারীদের ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রোহিঙ্গা বস্তি পরিচালনা কমিটির কথিত সেক্রেটারি রাকিবুল্লাহর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে রেখে তাদের সুবিধামতো স্থানে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান জানান, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা রকিবুল্লাহর ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কয়েক মাস আগে তাকে আটক করে বিজিবির মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলেও সে ফের অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গা বস্তিতে বহাল তবিয়তে বসবাস করছে।’

বিজিবি সদস্যদের কথিত সোর্সদের প্রশ্রয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ নাকচ করে কক্সবাজার ১৭ বিজিবির ব্যাটালিয়ান কমান্ডার লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার স্বার্থে যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন, তার অর্ধেকও কর্মরত না থাকায় অনেক সময় বিজিবির অগোচরে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। তবে এ ব্যাপারে বিজিবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজনের সহায়তায় অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি জানান।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031