প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আর কোনো দেশের হস্তক্ষেপ চান না। সার্কভুক্ত দেশগুলো যদি একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে তবে সংস্থাটি সফল হবে বলেও মনে করেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গত শনিবার ভারতের গণমাধ্যম টাইমস নাউ’কে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। সংবাদমাধ্যমটির ন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর সৃঞ্জয় চৌধুরীকে দেয়া সাক্ষাতকারে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশগুলোর সম্পর্ক, তিস্তার পানি সঙ্কট, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলো যদি একে অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে, তবে এই সংস্থাটি সফল হবেই। আমাদের এমন একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে। যেখানে কোনো দেশ অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। এটা নিশ্চিত হলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। হস্তক্ষেপ করা হলে সেটা হবে না।’
বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা দেখা গেছে। তবে আমরা এ তৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। জঙ্গিবাদসহ কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে বাংলাদেশের মাটি থেকে সমর্থন করা হবে না’
সাক্ষাতকারের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ২০১৬ সালের পরে বাংলাদেশে আর কোনো জঙ্গি হামলা না হওয়ার জন্য শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেন সৃঞ্জয়। বলেন, ‘সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে যে সংকটগুলো আপনাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে, তার অনেকগুলোই পাকিস্তানের সৃষ্টি।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই, কোনো সীমানা নেই।’ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ভয়াল স্মৃতির উল্লেখ করে বলেন, ‘বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের বাকি সব সদস্যদের সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ের ৬ বছর পরে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আমি নিজেও বারবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি।’
এসময় ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় তার সমাবেশস্থলে বোমা পুঁতে রাখা এবং ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনভাবেই চাই না, আমাদের দেশের মাটিকে ব্যবহার করে প্রতিবেশি কোন দেশে সন্ত্রাসী হামলা হোক। কারণ মনে রাখবেন, যদি আমরা এ ধরনের কাজকে সমর্থন দিই, তাহলে আমাদের জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেকারণে দেশে সন্ত্রাসবাদী কোনো ঘাঁটি আছে কিনা, কিংবা সন্ত্রাসী কোনো তৎপরতা চলছে কিনা, তা সব সময় খেয়াল করি। এ সংক্রান্ত কোনো কিছু পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান এমনটাই।’
‘কোনো দেশ সন্ত্রাসী তৎপরতায় মদদ দিলে সে দেশই ভোগান্তিতে পড়বে। কারণ দেশ মদদ দিলে দেশের কিছু মানুষও সেই অপতৎপরতায় উৎসাহিত হবে। এতে করে শান্তি বিনষ্ট হবে। আর শান্তি ছাড়া কোনো উন্নয়ন হয় না। আমি চাই আমার দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় থাক। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত¦ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশিদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সব সময়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি স্বীকার করছি, আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, মানুষ মারার চেষ্টা হয়েছে। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা দেখা গেছে। তবে আমরা এ তৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’
এ বিষয়ে পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে দেশটির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সাক্ষাতকার গ্রহনকারী সৃঞ্জয় এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শেখ হাসিনা। তবে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ককে ‘দ্বিপাক্ষিক’ বলে উল্লেখ করলেও দেশ দুটির সম্পর্ক নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
সাক্ষাতকারে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ‘তিস্তার পানি’ ও ‘ রোহিঙ্গা সমস্যা’ বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পানি বণ্টনের বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাপূর্ণ ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রত্যাবসনে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তারা এখনও প্রত্যাবসনে প্রস্তুত নয় বলে আমাদেরকে জানিয়েছে।’
‘আমি মিয়ানমারকে বলেছি, রোহিঙ্গারা সে দেশে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। এজন্য মিয়ানমার সরকারের উচিত তাদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। কেননা তারা এখানে চিরদিন থাকতে আসেনি। তারা সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যবহৃতও হতে পারেন।’