প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন আবার ক্ষমতায় গেলে বেকার সমস্যার সমাধান করবেন জানিয়ে , কাউকে আর চাকরি চাইতে হবে না। বরং যোগ্যরা যেন চাকরি দিতে পারে সে ব্যবস্থা করবে সরকার।
রবিবার বিকালে রংপুরের পীরগঞ্জে এক নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুরে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে আরেক সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। পরে তিনি নির্বাচনী প্রচারে দিনাজপুরে যান।
নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে জামায়াত মানুষকে হত্যা করেছে, ঘরে ঘরে আগুন দিয়েছে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গাড়িতে আগুন দিয়েছে। মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারে, তারা মানুষ না দানব। তাদের থেকে সাবধান থাকবেন। তাদের নেত্রী চুরি করে অতিমের টাকা মেরে খেয়ে এখন জেলে। এরা দেশের কী উন্নতি করবে? এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একটা মানুষও দরিদ্র থাকবে না। একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। একটা মানুষও চিকিৎসা ছাড়া থাকবে না। আমরা সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা চাই, আপনারা শুধু নৌকায় ভোট দেবেন। আমরা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সমৃদ্ধ দেশ। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেভাবে উন্নয়ন করেছি, অতীতের কোনো সরকার তা করেনি। আপনারা ভোট দিন, আমরা উন্নয়ন দেব।’
অতীতের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যখন রংপুর অঞ্চলে আসতাম, তখন এখানে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, মঙ্গা লেগে থাকত। আমি তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমরা সরকারে আসলে মঙ্গা দূর করব। ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা মঙ্গা দূর করেছিলাম। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে আবার মঙ্গা এনেছে। আমরা ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় এসে মঙ্গা দূর করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি, শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে নতুন নতুন ভবন তৈরি করেছি। পুরনো ভবনের উন্নয়ন কাজ করেছি। আপনার সন্তানের বই আপনাকে কিনতে হবে না। বই আমি কিনে দিচ্ছি। এক কোটি ৪০ লাখ মায়ের কাছে মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। দুই কোটির বেশি ছাত্রছাত্রীকে উপবৃত্তি দিচ্ছি।’
‘মেয়ে’ শারমিনের জন্য ভোট প্রার্থনা
রংপুর-৬ আসনে শেখ হাসিনার শ্বশুর বাড়ি। আসনটিতে নিয়মিতভাবে তিনি নির্বাচন করে আসছিলেন। ২০০৮ সালে বিজয়ী হওয়ার পর উপনির্বাচনে শিরীন শারমির চৌধুরী আসনটির সাংসদ হন। এবারও এই আসনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও পরে ‘মেয়ে’ শারমিনের জন্য আসনটি ছেড়ে দেন।
শিরীন শারমিনকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখানে এত উন্নয়ন করেছি, তাতে আপনাদের দাবিও করতে হয়নি। আমরাই করে দিয়েছি। আমি শিরীনকে আপনাদের প্রার্থী করেছি। সে আপনাদের দিন রাত সময় দিয়েছে। আমি এত সময় দিতে পারতাম না। আজকে আমার মেয়ে শিরীনকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। তাকে আপনারা নির্বাচিত করেন। আমার প্রতিনিধি হিসেবে শিরীন আপনাদের কাজ করে যাবে। জয়-পুতুল তাকে সাহায্য করছে, ভবিষ্যতেও করবে।’
আওয়ামী লীগ জয়ী হলে শিরীন শারমিনকে আবারো জাতীয় সংসদের স্পিকার করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পীরগঞ্জের জন্য মাস্টার প্লান করা হচ্ছে। এখন ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে। সারা পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। ২০২০ সালের মধ্যে সারাদেশে কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না। আমরা রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি, চারলেন সড়ক করে দিয়েছি। ১০ বছর আগে কোথায় ছিল এই এলাকা, এখন সব মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। শিরীনকে ভোট দেওয়া মানে আমাকে ভোট দেওয়া। পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপতির পরে স্পিকার। তারপর প্রধানমন্ত্রী। আমরা সরকার গঠন করতে পারলে তাকে আবার স্পিকার হিসেবে রাখব।’
এরপর তিনি রংপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টিপু মুন্সি, রংপুর-৫ আসনে আশিকুর রহমানকেও পরিচয় করিয়ে দেন। একই সময়ে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ ও পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মন্ডল বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করায় তাকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। কারণ ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে।’
জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জ থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা করেন। সেখান থেকে তিনি ঢাকায় ফিরবেন।