ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যেন কোনোভাবেই হার মানতে রাজি নয় । নির্বিঘ্নে ইয়াবার চালান আনতে এত দিন তারা নিত্যনতুন রুট ব্যবহার করছিল। ক’দিন পর তা ধরা পড়ে যায়। একই সাথে ধরা পড়ে কোটি কোটি টাকার চালান। ইয়াবার রং হয় গোলাপি। তাই তারা আবারও কৌশল পরিবর্তন করেছে। এবার সন্ধান মিলেছে সাদা রঙের ইয়াবার। ইয়াবার চালান আটক ঠেকাতে রং ও গন্ধ পাল্টে দিচ্ছে উৎপাদনকারীরা। কখনো ধরা পড়ছে হলুদ রঙের, কখনোবা সবুজ।
চট্টগ্রাম কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট চট্টগ্রামের প্রধান মো. শহীদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের একের পর এক কৌশল পাল্টানো প্রমাণ করে তারা স্বস্তিতে নেই। এ অস্বস্তি কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণেই। কৌশল যেটাই নেওয়া হচ্ছে ধরা তাদের পড়তেই হচ্ছে। ইয়াবার ঘাঁটি খ্যাত টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ আজাদীকে বলেন, অভিযানে ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। এতে সাদা চোখে মনে হচ্ছে, মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মাদকের সহজলভ্যতা অনেক কমেছে।
তিনি বলেন, মাদক বিক্রি বন্ধে ভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন তারা। এখন হোম ডেলিভারি ও মোবাইল ফোনে প্রায় দ্বিগুণ দামে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর ও কণ্ঠস্বর অপরিচিত হলে তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে না। অপরিচিত কারো কাছে মাদক বিক্রি করলেও কয়েকটি জায়গায় ঘুরিয়ে লোকজন দিয়ে যাচাই-বাছাই করে বিশ্বস্ত মনে হলে তারপর ওই গ্রাহকের কাছে মাদক বিক্রি করছে তারা। সাঁড়াশি অভিযানের কারণে তালিকাভুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে তাদেরই নিয়োগ করা কিছু নতুন মুখ মাদক বিক্রি করছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মুখে নতুন কৌশল হিসেবে গোলাপি রং পাল্টে এখন বাজারে সাদা রঙের ইয়াবা বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র। গত ২১ অক্টোবর ঢাকার হাতিরঝিলে অভিযান পরিচালনা করে নতুন সাদা রঙের ইয়াবা দেশে প্রবেশের বিষয়টি প্রথম জানাজানি হয়। র‌্যাবের একটি টিম ৮০ পিস ইয়াবাসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতের নাম রাজিব মোল্লা (২২)।
র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাজিব জানায়, সমপ্রতি মাদকবিরোধী অভিযানে কোণঠাসা হয়ে নিত্যনতুন কৌশলের অংশ হিসেবে সে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী টেকনাফের এক মাদক ব্যবসায়ীর সহায়তায় মিয়ানমারে তৈরি সাদা রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি শুরু করেছে। মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে মাদক চক্রটি মিয়ানমার হতে গোলাপি রঙের ইয়াবার পরিবর্তে সাদা রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট আনছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধারণা, রং পরিবর্তন করা ইয়াবা বিপণনের নতুন কৌশল। ইয়াবা বড়িগুলো আটকের পর র‌্যাব সদস্যরা প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। জব্দ করার পরপরই মাদক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয় এবং এতে ইয়াবা তৈরিতে ব্যবহৃত নিষিদ্ধ অ্যামফিটামিন উপাদান পাওয়া যায়। ইয়াবায় সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ থাকে। নতুন জব্দ করা ট্যাবলেটে সে ধরনের কোনো ঘ্রাণ নেই। র‌্যাব সদস্যরা বলেন, যে কেউ প্রথম দেখায় এটি সাধারণ ট্যাবলেট বা অ্যান্টিবায়োটিক মনে করে ভুল করতে পারেন।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে গোলাপি রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি কষ্টসাধ্য হচ্ছে মাদক কারবারিদের। এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ব্যবসার নতুন কৌশল হিসেবে সাদা রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করছে। এই চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।
মিয়ানমার থেকে সাধারণত যেসব ইয়াবা আসে সেগুলোর রঙ গোলাপি এবং প্রতি পিসের ওজন ০.১০ গ্রাম। বর্তমানে নতুন ধরনের যে ইয়াবা ধরা পড়ছে সেগুলোর রং হলুদ এবং বর্তমান ব্যবহৃত ইয়াবার চেয়ে আকারে দ্বিগুণ। ওজন ০.২০ গ্রাম। পরীক্ষা করে দেখা যায়, গোলাপি ইয়াবায় যে ধরনের মিথাইল আ্যামফিটামিন রয়েছে, হলুদ ইয়াবায়ও সে ধরনের মিথাইল আ্যামফিটামিন রয়েছে। তবে এটা আকারে বড় ও গন্ধহীন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031