নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট । গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের এবং একই সময় এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমদ গুলশানে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এসময় উভয় নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচনের দাবি তারা জানিয়ে আসছেন সেই সাত দফা থেকে তারা সরে আসেনি; বরং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া তারা ভোট এক মাস পেছানোরও দাবি জানান।
প্রেসক্লাবে কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ন্যূনতম শর্তও এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও বিটিভিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রচার হচ্ছে যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া সব দল ও জনগণের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেনি।’ তিনি আারো বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। কিন্তু এরকম ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘তাদের সাত দফা দাবি থেকে তারা সরে যাচ্ছেন না। তবে বর্তমান তফসিল বাতিল করে এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন।’
২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করেছে, সেখানে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রাখা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক জোটগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিলে তাতে তার দল আপত্তি করবে না। তবে নির্বাচন পেছানো হলে তা যৌক্তিকভাবে করতে হবে এবং যে দলগুলো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কাদের।
ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বিবৃতিতে নির্বাচন পেছানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন চার দলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তফসিল দুই দফা পেছানো হয়েছিল। আর জোটের সাত দফা দাবির বিষয়ে সেখানে বলা হয়, ‘এসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অব্যাহত রাখবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে ফ্রন্ট।’
লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি। জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।’
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনতো চলতেই থাকবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং পরিবেশ তৈরি করার জন্য আন্দোলন চলবে।’
কামাল হোসেনের নামে ফখরুলের পড়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়া অধিকার হরণ করেছে। নিশ্চিতভাবে আগামী নির্বাচন দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের নির্বাচন হবে। আমরা বিশ্বাস করি, দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্কট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটা সুখী, সুন্দর, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।’
ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন করলে এবং এক দল অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে গতকাল রোববারের মধ্যেই তা নির্বাচন কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলো অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করবে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা পরে জানাব।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, জেএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওদিকে প্রায় একই সময়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। জোটের পক্ষে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমদ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন এবং ঐক্যফ্রন্টের মতোই নির্বাচনী তফসিল পেছানোর দাবি জানান। তবে একই সাথে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের তীব্র সমালোচনা করেন। পাশাপাশি বিএনপি তাদের জোটের সাত শরিক দলকে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কর্নেল অলি বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অনাচারসহ তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় সীমাহীন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। লিখিত বক্তব্যে অলি আহমেদ বলেন, আমরা দাবি করছি, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে। তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করবে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও ২০ দলের সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অলি আহমেদ।
জোটগতভাবে নির্বাচন করলে এবং শরিক দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে রোববারের মধ্যেই তা জানাতে সব নিবন্ধিত দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপি তাদের সাত শরিক দলকে ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
চিঠিতে বলা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮টি দলের যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করবেন। বিএনপি ছাড়া বাকি সাত দল হল- কল্যাণ পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্ট (জাগপা), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |