আওয়ামী লীগে বইছে নির্বাচনী আমেজ তফসিল ঘোষণার পর । কিন্তু  আমেজ নেই সিলেট-৪ আসনের বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে। নির্বাচনের পরিবেশ কি হতে পারে- এ ভাবনা ভোটারদের। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী, কর্মী-সমর্থক ও নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন। অন্যদিকে বিএনপিসহ তাদের জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার, মামলা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোতে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

প্রতিদিনই এ আসনের কোনো না কোনো এলাকায় পথসভা, গণসংযোগসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। উন্নয়ন তৎপরতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সভা সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজের জন্য নৌকায় ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি ইমরান আহমদ।

গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। এ তিন উপজেলায়ই গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। গ্রেপ্তার এড়াতে রাতে ঘরে ঘুমান না ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপি নেতারা। আতঙ্কিত তরুণ নেতাদের কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণেও আছেন। শুধু বিএনপিই নয় নিবন্ধন নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াতে ইসলামীও আছে একই শঙ্কায়। পাশাপাশি গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারাও। সম্প্রতি সিলেট জেলা জমিয়তের সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আম্বিয়া কয়েছ ও সিলেট মহানগর যুব জমিয়তের প্রচার সম্পাদক মাহদি হাসান মিনহাজসহ দু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি নেতা কর্মীরা সক্রিয়ভাবে তাদের পদচারণা না করতে পারায় তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রতিককালে বেশ কজন প্রার্থী বিএনপি জোটের টিকিট প্রাপ্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করলেও গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সদ্যসমাপ্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের পর থেকে এখন তাদের সিংভাগই চুপসে গেছেন। তিনটি উপজেলার প্রথম সারির নেতাদের ন্যায় নীরবতায় সময় কাটছে বিএনপি জোটের টিকিট প্রত্যাশীদেরও। তবে এ আসনের উপজেলা সমূহে সক্রিয় না থাকলেও সিলেট জেলায় বিএনপি ও জোটের সমাবেশে বেশ সক্রিয় রয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি ও  বিএনপি জোটের টিকিটের দৌড়ে শীর্ষে থাকা দিলদার হোসেন সেলিম। সদ্যসমাপ্ত ড. কামালে নেতৃত্বাধীন সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশেও তার তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও সিলেটস্থ তার বাস ভবনে প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন প্রস্তুতির পরামর্শ দিচ্ছেন তাদের। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জের একাধিক বিএনপি নেতা জানান, সরকারের দমননীতির কারণে তারা রাজনৈতিক অবস্থানে সক্রিয় নয়। নেতাকর্মীদের মামলা আর পুলিশি হয়রানিতে শিকার হতে হচ্ছে।

কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপিই বিজয়ী হবে। গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শাহ আলম স্বপন জানান, নির্বাচন নিয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমরা সক্রিয়ভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবো। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ ধানের শীষের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের গঠনমূলক কঠোর সমালোচনায় সক্রিয় জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবুল হাসিম। তিনি জানান, একাধিক মিথ্যা মামলায় আমিসহ আমার অগণিত সহকর্মীরা নির্যাতিত। রাতে ঘরে ঘুমাতে পারি না।

পুলিশি অভিযানের কারণে আমরা আতঙ্কিত, গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ফেয়ার ইলেকশন হলে ধানের শীষেরই বিজয় হবে। এ আসনের ৩টি উপজেলা জুড়েই মাঠে সক্রিয়ভাবে অবস্থান করে চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি ইমরান আহমদ। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা, সেমিনার, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন, তদারকি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সভা সমাবেশ থেকে  বাস্তবায়িত, চলমান এবং আবারো নির্বাচিত হলে এখানকার অসমাপ্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট চাইছেন তিনি। তার সভা, সমাবেশে জনগণের উপস্থিতিও বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিপূর্বে কোম্পানিগঞ্জ-সিলেট সড়ক, হাইটেক পার্ক, জাফলং ব্রিজ, অগণিত নতুন বিদ্যাপীঠ, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নির্মাণাধীন রেখে অগ্রগামী করায় প্রার্থীদের মধ্যে তিনি রয়েছেন সবচেয়ে আলোচিত। এ পর্যন্ত ৫ বারের নির্বাচিত হওয়া এই এমপির বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গে সহনশীল আচরণের জন্য এখনো তিনি দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ গোলাম কিবরিয়া হেলাল জানান, নির্বাচনে আমাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থী ইমরান আহমদই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। এই সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই আমরা আসন্ন নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের ব্যাপারে কোনো চিন্তিত নই। আমরা প্রতিশ্রুত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করায় জনগণ আমাদের সঙ্গেই আছে তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের যেকোনো প্রার্থীর বিপরীতেই আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী  বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ একক হলেও বিএনপির একাধিক প্রার্থী হওয়ায় আসন্ন নির্বাচনে কে হচ্ছেন বিএনপি জোটের প্রার্থী তা স্পষ্ট হয়নি। তবে সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান সেলিম, জমিয়ত নেতা মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জের নাম শোনা যাচ্ছে। ভোটারদের মতে একাধিক প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031