যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে দেখা করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা । গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে ফাঁসির আসামি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার–২–এর সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, নিজামীর স্ত্রী, ছেলে–মেয়েসহ ছয়জন শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কারাগারে পৌঁছান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজামীর স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার নিজামী, ছেলে নজিব মোমেন ও নাইমুর রহমান, মেয়ে খাদিজা মোহসীনা ও পুত্রবধূ সালেহা ও রাইয়ানকে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়। কারাগারের একটি কক্ষে নিজামীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের ৪০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় বলে কারাগারের জেলার মো. নাশির আহমেদ জানান। খবর বিডিনিউজের।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে এই যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকরের আগে শেষ বিচারিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী নিজামী আছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার–২ এর কনডেম সেলে। সেখানে বসেই বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি রেডিওতে রিভিউ খারিজের খবর পান বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।
নিয়ম অনুযায়ী একাত্তরের বদরপ্রধান নিজামী এখন কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তিনি তা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পেলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে। সেক্ষেত্রে দণ্ড কার্যকরের আগে আরও একবার নিজামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে তার পরিবারের সদস্যদের।
নিজামীর আইনজীবী এস এম শাজাহান বৃহস্পতিবার রায়ের পর জানান, জামায়াতের আমির প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না– সে সিদ্ধান্ত তিনি বা তার পরিবারের পক্ষ থেকেই নেওয়া হবে। জেলার নাশির আহমেদ জানান, রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পেলে কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে নিজামীর সিদ্ধান্ত জানতে চাইবে। এর নিষ্পত্তি হলেই সরকার দণ্ড কার্যকর করতে পারবে।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে । শুক্রবার ঢাকায় এক আলোচনা সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অতীতে অন্যান্য ফাঁসি যেভাবে নিয়ম মেনে কার্যকর করা হয়েছে, এটাও সেভাবে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে কার্যকর করা হবে। হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একাত্তরের বদর প্রধান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের যে রায় আপিল বিভাগ দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার আবেদন বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সব বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে তা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। নিজামীর কাছে জানতে চাওয়া হবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার শেষ সুযোগ নিতে আগ্রহী কি না। জামায়াত আমির নিজামী তা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পেলে সরকার আদালতের রায় কার্যকর করবে।
আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের কাছে দণ্ড কার্যকরের সম্ভাব্য সময় জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, যেভাবে আইন পারমিট করে, সেভাবেই আমরা করব। নিজামীর রায়ের প্রতিবাদে রোববার তার দল জামায়াতের ডাকা হরতাল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, হরতালে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইন–শৃঙ্খলাবাহিনী। হরতালের নামে বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।