দিনের বেলায় ওরা খেলে বেড়ায় আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই পড়াশোনা করে। কিন্তু সূর্য ডুবে যাওয়ার পরেই শুরু হয় যত বিপত্তি। সূর্যের সঙ্গে সঙ্গেই যেন ফুরিয়ে যায় ওদের প্রাণশক্তি। নড়াচড়ার ক্ষমতা পর্যন্ত থাকে না ওদের।
অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি! পাকিস্তানের কোয়েত্তা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মিয়ান কুন্ডি নামে একটা ছোট্ট গ্রাম। আর সেখানেই বাবা-মা এবং ভাই-বোনেদের সঙ্গে থাকে শোয়েব, রশিদ এবং ইলিয়াস নামের তিন ভাই। ওদের বয়স এক থেকে তেরোর মধ্যে। তিন জনেই এক বিরল রোগে আক্রান্ত। আর এই রোগের বিষয়ে চিকিৎসকদের কাছে এখনও কোনও সঠিক তথ্য নেই।
অবশ্য এই তিন ভাই ছাড়া বাকি ভাই-বোনেদের এই সমস্যা নেই বলেই জানিয়েছেন ইলিয়াসদের বাবা হাসিম। তিনি আরও জানিয়েছেন, জন্মের পর থেকেই এই অদ্ভুত সমস্যা দেখা গিয়েছিল তাঁর তিন সন্তানের শরীরে। কিন্তু গ্রামবাসীরা যখন এই সমস্যার কথা জানতে পারেন, তখন অবাক হয়েছিলেন তাঁরা। ওদের তিন জনের নামও দিয়েছিলেন ‘সৌর শিশু’। অথচ তিন সন্তানের এই সমস্যা নিয়ে চিন্তায় একশেষ বাবা-মা। ইসলামাবাদে তিন ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছেন পেশায় নিরাপত্তা রক্ষী হাসিম। ওই তিন ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ন’জন চিকিৎসক নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
কী বলছেন তাঁরা? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এটা বিরল রোগ। আর পাকিস্তানে এই প্রথম এমন জটিল রোগ দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ইলিয়াসদের সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হয়েছে। এমনকী, ওদের রক্তের নমুনা আর সব রকম রিপোর্টও বিদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও ফলই হয়নি।
চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলছে, তা নিয়ে অবশ্য মাথাব্যথা নেই তিন ভাইয়ের। দিনের বেলায় তারা আর পাঁচটা শিশুর মতোই স্বাভাবিক। ওদের মধ্যে দুই ভাই স্কুলে যায়, অন্য ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেটও খেলে। এমনকী মাঝে মাঝে বাবার কাজেও সাহায্য করে। কিন্তু সন্ধে নামার সঙ্গে সঙ্গেই যেন অন্ধকার নেমে আসে ওদের শরীরেও। পঙ্গু হয়ে যায় ওরা। কিন্তু ভোরবেলায় সূর্যের প্রথম কিরণের সঙ্গে সঙ্গেই আবার প্রাণশক্তি ফিরে পায় ওরা। তবে হাসিম অবশ্য জানিয়েছেন, সূর্যের দেখা না মিললেও ওদের রুটিনের অবশ্য কোনও পরিবর্তন হয় না।
এত কিছুর পরেও অবশ্য আশা ছাড়ছেন না চিকিৎসকেরা। দেশ-বিদেশের চিকিৎসকরা মিলে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন এই রোগের প্রতিকার।
কিন্তু কীসের ভিত্তিতে আশার আলো দেখছেন তাঁরা?
এক চিকিৎসক জানালেন, এই বিরল রোগের মধ্যেও অবশ্য একটা ভাল দিক রয়েছে। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই তিন ভাইয়ের অবস্থার কোনও অবনতি হয়নি। ফলে মনে হচ্ছে, এই রোগের নিশ্চয়ই কোনও না কোনও প্রতিকার থাকবেই।