নিষেধাজ্ঞা মা ইলিশ সংরক্ষণে আসছে। কিন্তু তার আগেই বঙ্গোপসাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ধরে আনছে জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার সময় মোটা অঙ্কের মুনাফা গড়তে প্রতিদিন শত শত টন মা ইলিশ মজুদ করছে আড়তদাররা।
রবিবার সকালে চট্টগ্রামের মাছের প্রধান কেনাবেচার হাট ফিরিঙ্গীবাজার ফিশারী ঘাটে মা ইলিশ ধরে আনা ফিশিং বোট ও ট্রলার থেকে আড়তে মজুদের এমন চিত্র দেখা গেছে। এর সত্যতা স্বীকার করেছেন ফিশারী ঘাটের আড়তদাররাও।
ফিশারী ঘাটে মাছের বৃহৎ আড়তদার সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির পরিচালক মো. মহসিন বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় সরবরাহ সংকট যাতে না থাকে সে কারণে ইলিশ মাছের মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। অথচ এসব ইলিশ মাছের পেট এখন ডিমভর্তি।
তিনি বলেন, সরকার আগামী ৭ থেকে ২৮ই অক্টোবর পর্যন্ত সাগরে ইলিশ মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। এ সময়ে ডিম ছাড়বে মা ইলিশ। কিন্তু বাজারে ইলিশ মাছের চাহিদা বেশি। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় সরবরাহ সংকট যাতে না হয় সে কারনে আগেভাগে সাগর থেকে ইলিশ মাছ ধরে মজুদ করা হচ্ছে।
শাহ আমানত ফিশারীর মালিক শফিকুল আলম বলেন, প্রায় ১০ হাজার ফিশিং বোট ও সাত শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার প্রতিদিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে। তার মধ্য্যে তিন হাজার ফিশিং বোট ও শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার ফিশারী ঘাটে নিয়মিত মাছ নিয়ে আসে। এরমধ্যে ফিশারীঘাটে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ টন ইলিশ মাছ আগে ধরে আনলেও এখন তা ৬০০ টন ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সাগরে এখন ইলিশ মাছ অনেক বড় হয়েছে। বড় আকারের প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। যেগুলো এনে মজুদ করা হচ্ছে। ফিশারী ঘাটের প্রায় দেড়শ আড়তে কম করে হলেও বর্তমানে ১০ হাজার টন ইলিশ মাছ মজুদ করা হয়েছে। আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে আরও ৪ থেকে ৫ হাজার টন ইলিশ মাছ মজুদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এ সময় মজুদ থেকে বাজারে ইলিশ মাছ সরবরাহ করা হবে। তখন ইলিশের দাম বর্তমান মূল্যের চেয়েও ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। এতে লাভের অঙ্কটাও বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
কিন্তু ডিমওয়ালা ইলিশ মাছগুলো কেন ধরা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিম তো থাকবেই। ডিমের কারনেই তো নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এখন তো নিষেধাজ্ঞা নেই। নিষেধাজ্ঞার সময় তো আর ধরবে না। এখন তো কোনো সমস্যা নেই বলে জানান তিনি।
রবিবার সকালে বঙ্গোপসাগর থেকে ফিশারী ঘাটে মাছ নিয়ে আসা একটি ট্রলারে জেলে আমিনুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে অন্যসব মাছের পাশাপাশি এখন ঝাকে ঝাকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। বাজারে ইলিশ মাছের দাম বেশি। তাই ইলিশ মাছ বেশি ধরছি আমরা।
তিনি জানান, সাগরে প্রতিটি ট্রলারে ২-৩ দিনে দেড় থেকে দুই টন ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। ইলিশ মাছের আকারও বেশ বড়। প্রতিটি ইলিশ মাছ এক থেকে দেড় কেজি ওজনের। কোন কোনটি দুই কেজি ওজনেরও আছে। তবে যতগুলো ইশি মাছ ধরা পড়ছে প্রতিটির পেট এখন ডিমে ভর্তি। কয়েকদিন পর মা ইলিশ ডিম ছাড়বে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মমিনুল হক বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছরের মতো আগামী ৭ই অক্টোবর থেকে ২৮ই অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন দেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়টাকে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম বলে ধরা হয়। এ ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রির পাশাপাশি সরবরাহ, মজুদও নিষিদ্ধ করা হয়। এ আদেশ অমান্য করলে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
তিনি বলেন, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে এ সময় চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী জেলার সব নদ-নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে সমুদ্র উপকূল ও মোহনায়ও ইলিশ ধরা যাবে না।
কিন্তু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে নিষেধাজ্ঞার আগেই ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ ধরে দেশের সম্পদ ধ্বংস করছে। যা ভাবতে সত্যিই খারাপ লাগে। এটি নৈতকতার বিষয়ও। নিষেধাজ্ঞা সময় না হলেও জেলেরা ডিমওয়ালা মাছগুলো না ধরে পারত।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ। এ সময়ে মাছঘাট, মৎস্য আড়ত, হাটবাজার, চেইন শপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হবে।