চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবুর রহমান মাদকের বিস্তার ঠেকাতে চোরাকারবারিদের মেরে ফেলাই সবচেয়ে কার্যকর পথ বলে মন্তব্য করেছেন। তার দাবি, এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বন্দরনগরীর কোতয়ালি থানা কমিউনিটি পুলিশের মাদকবিরোধী সমাবেশে উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সিএমপি কমিশনার একথা বলেন। নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ধর্মীয় উপদেশও কাজ হবে না, বড় ভাই বলে মাথায় হাত বুলিয়েও কাজ হবে না। সবচেয়ে বড় কাজ হবে যেটা হচ্ছে… জীবনহানি। বাস্তব অর্থে জীবনহানি।’
নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনিনগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি
সিএমপি কমিশনারের এমন বক্তব্য দেওয়ার সময় উপস্থিত লোকজন, কমিউনিটি পুলিশ ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা করতালি দিয়ে তার বক্তব্যকে স্বাগত জানান।
গত মে মাসে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর চার মাসে আড়াইশর বেশি প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার সংখ্যায় বেশি।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা যে মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছি; আমি মনে করি এর মেইন বিষয় হচ্ছে উপদেশ দিয়ে কাজ হবে না।’
কমিশনারের যুক্তি, ‘মাদক ব্যবসায়ী যদি চিন্তা করে যে এ ব্যবসা করলে তার জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে সে অবশ্যই এ ব্যবসা থেকে অন্য ব্যবসায় চলে যাবে।’
তবে বন্দুকযুদ্ধের সন্দেহভাজন মাদকের কারবারিদের মৃত্যু নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, পুলিশের বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য নয়, আসলে সন্দেহভাজনদেরকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের সুরক্ষার জন্য অস্ত্র রাখে। এ অস্ত্র উদ্ধারে যেভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যাচ্ছে, তাতে অনেক মাদক ব্যবসায়ীর জীবন চলে যাচ্ছে।’
মাদকের কারবার এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে মাহবুব বলেন, ‘এখন মাদক ব্যবসা হয় গোপনে। মোবাইল ফোনে কিংবা মোটর সাইকেলে ফেরি করে। আমাদের তৎপরতা আছে বলে সেটা সম্ভব হয়েছে।’
আগামীতে আরও কর্মসূচি আসছে এবং পুলিশ ‘আরও বেশি অ্যাকশন’ নেবে বলেও হুঁশিয়ার করেন সিএমপি কমিশনার।
‘পুলিশেও মাদক চোরাকারবারি আছে’
পুলিশের মধ্যেও মাদক চোরাকারবারে জড়িত কিছু লোক আছে বলে স্বীকার করেন সিএমপি কমিশনার। বলেন, ‘সিএমপিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সাত হাজার ফোর্স আছে। আমি অস্বীকার করব না- আমাদের পুলিশ বাহিনীতে পাঁচ-দশজন লোক নাই। অবশ্যই আছে। আমরা চাই এ শয়তানগুলোকে আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে।’
কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে তিনজন এসআইকে ইয়াবার কারবারের জন্য কারাগারে পাঠানোর কথাও জানান মাহবুব।
‘আমি তাদের ওন করি না। আপনাদের জন্য যে শাস্তি পুলিশ সদস্যদের জন্য একই শাস্তি।’
‘আমার পুলিশ ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু কেউ ইয়াবা ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকবে এটা হতে পারে না। যদি কেউ থেকে থাকেন, তাহলে পুলিশের চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করে দেন। পুলিশের চাকরি মহৎ চাকরি।’
সীমান্তে পাহারার পরও কীভাবে ইয়াবা ঢুকছে?
সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাহারায় থাকার পরও মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে কীভাবে ইয়াবা দেশে ঢুকছে- সে প্রশ্নও তোলেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার।
‘সীমান্ত রক্ষায় যারা আছেন তাদের ব্যর্থতার কথা আপনাদের কারও মুখ থেকে আসে না। আমরা কেউ চিন্তা করি না- মাত্র ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষা করতে পারলে এ ইয়াবা আসতে পারত?’
‘সীমান্তে ইয়াবা প্রবেশের সময়ই তা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। কিন্তু সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে পুলিশের করার কিছুই থাকে না।’
সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড যাতে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে সে বিষয়ে সরকার যেন নির্দেশনা দেয়, সে আহ্বানও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কোতয়ালি থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি এসএম শাহাব উদ্দিন। চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম, প্যানেল মেয়র হাসান মাহমুদ হাসনি বক্তব্য রাখেন।